ফেলে দেওয়া গদির ফোম খাদ্য জোগাচ্ছে শরণার্থী শিবিরে! গড়ে উঠছে মরুদ্যান

ফেলে দেওয়া পুরোনো গদির ফোমগুলো টুকরো করে, বিশেষধরনের 'নিউট্রিয়েন্ট মিক্স' বা পু্ষ্টির মিশ্রণের সঙ্গে মিলিয়ে, বিশেষ  উপায়ে তৈরি মাটি বা 'ফোম সয়েল' -এ গবেষকদের সহায়তায় সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তিতে মরুভূমিতে ফসল ফলাচ্ছেন জাতারি শিবিরের শরণার্থীরা।

জর্ডান: প্রায় তিন বর্গমাইল এলাকা জুড়ে জর্ডানের জাতারি শরনার্থী শিবির যা ইতিমধ্যেই আয়তনে জর্ডনের পঞ্চম বড় শহর। এখানকার জনসংখ্যা দেশের ১০শতাং। রাষ্ট্রপুঞ্জ সাহায্যের হাত বাড়ানোয় এই শহরের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তবে শুধুই বাহ্যিক। কারণ এরফলে শহরের শরণার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে সেভাবে কোনো প্রভাব পড়েনি। শরণার্থী হিসেবে দেশের স্বাভাবিক নাগরিকের মত কর্মসংস্থানের সুযোগ তাদের নেই। তাই দৈনিক চাহিদা পূরণে সরকারি বা অন্যান্য সাহায্যের ওপরেই নির্ভরশীল বেশিরভাগ উদ্বাস্তু পরিবারগুলি। 

এই শরণার্থীদের অন্নসংস্থানকারী কর্মপরিকল্পনা হিসেবে এক অভিনব উপায় খুঁজে পেয়েছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। যা কাজের পাশাপাশি তাদের খাদ্যের জোগানও সুনিশ্চিত করবে। পুরানো ম্যাট্রেস বা গদি ব্যবহার করে মরুভূমিতেও ফসল ফলানোর ব্যবস্থা করেছেন গবেষকেরা। যা এখানকার মানুষ নিজেরাই ফলাতে পারে। এমন একটি পরিকল্পনা যা ভাগারের বর্জ্য কম করার পাশাপাশি তাজা সবজির জোগান দেবে।  

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষকদের দলটি শরনার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন। পুরোনো ফেলে দেওয়া গদি ভাগার থেকে তুলে এনে তার ফোমগুলি থেকে বিশেষ উপায়ে মাটি তৈরি করছেন যাকে 'ফোম সয়েল' বলা হচ্ছে। এই মাটিতেই সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তিতে মরুভূমিতে ফসল ফলাচ্ছেন জাতারি শিবিরের শরণার্থীরা।  প্রথমে গদির ফোমগুলো টুকরো করে বিশেষ ধরনের 'নিউট্রিয়েন্ট মিক্স' বা পু্ষ্টির মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে তারপর তাতে সরাসরি একটি করে ছোট্ট চারা গাছ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরফলে গাছের শিকড়গুলিও ছোটো থেকেই শক্ত অবলম্বন পাচ্ছে। 

গবেষকদের দাবি যে এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন মাটিতে রোপণের চেয়ে ৮০ শতাংশ কম জল ব্যবহার করেই সম্ভব এবং এতে কীটনাশক ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। গবেষকদের আরও দাবি, তাদের এই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া যে কেবল মরুভূমির এই শিবিরে টমেটো, পুদিনার মতো তাজা শাকসব্জী এবং শাকসব্জিই ফলাতে সাহায্য করছে তাই নয়,, একইসঙ্গে শরণার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি সাধন করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই অভিজ্ঞ কৃষক। 

এপ্রসঙ্গে গবেষকদের মতে, কেউ যখন বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, তখন তাকে বহু অভ্যেস ছেড়ে আসতে হয়।  যেমন এক কাপ তাজা পুদিনা চা বা বাচ্চাদের গাছ লাগানোর প্রশিক্ষণ, “শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মরুভূমির উদ্যান প্রকল্পের পরিচালক ডঃ মোয়েদ আল মেসেলমানি বলেছেন, “এই প্রকল্পটি মানুষকে নিজের বাড়ির পরিবেশ ফিরিয়ে দেয় এবং  তাদের ভবিষ্যতের আশাও জোগায়। 

তবে এই প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক নয়। ২০১৬  সাল থেকে শেফিল্ডের গবেষক দলটি জর্ডানের জাতারি শিবিরে ১০০০ শরণার্থীকে এভাবে ফসল ফলানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যেখানে 80,000 শরণার্থী রয়েছে। তারা এখন এটি অন্যান্য শিবিরের মোট 3,000 শরণার্থীকে ‌এই প্রশিক্ষণ দেওয়া।  গবেষকদের মতে, শিবিরের সমস্ত লোক এই কাজ শিখলে ভাল হবে, কারণ ওই অঞ্চলে মাটি বাড়ানোর পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাই এখন তাঁরা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এই কাজ করেছেন। তবে এই প্রকল্পকে  আরও উৎপাদনশীল এবং আরও বড় আকারে করার কথা ভাবছেন।

তাদের আশা যে শরণার্থীরা একে অপরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই প্রকল্পটি চালিয়ে যাবে, এবং তাদের ফসল বিক্রি করা অর্থ দিয়ে আরও বড় প্রকল্পে কাজে লাগাবে। শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টনি রায়ানের কথায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে জর্ডানের মরুভূমির বাগানগুলিকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে পারলে বিশ্বজুড়ে তা কার্যকর করা যাবে এবং লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর জীবনযাপনে উন্নতির সহায়ক হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − 4 =