যে স্ট্র্যাটেজিতে হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ!

দিল্লি: এবার বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি ব্যবহার করেই কী ভারতের লক্ষ্মণরেখা টপকে হাসিনাকে হরণ করবে বাংলাদেশ?শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও কী খাটবে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি? পদ্মার ওপারে একের…

দিল্লি: এবার বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি ব্যবহার করেই কী ভারতের লক্ষ্মণরেখা টপকে হাসিনাকে হরণ করবে বাংলাদেশ?শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও কী খাটবে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি? পদ্মার ওপারে একের পর এক অভিযোগ জমছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।বাড়ছে চাপ।বাংলাদেশের হাতে হাসিনাকে তুলে দিতে এবার বাধ্য হবে না তো নয়া দিল্লি?

হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত কী এবার সত্যিই বড় কোনো চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি? কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তাতে উদ্বেগ বাড়ছে বই কমছেনা।

বলা হচ্ছে, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন যে কোনো সময় করতে পারে ঢাকা। সেই প্রসেস অলরেডি শুরুও হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক মামলা রুজু হয়েছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে বাতিল করা হচ্ছে তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্টও। তাহলে কি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে এবার বাংলাদেশের হাতে হাসিনাকে তুলে দিতে বাধ্য হবে নয়াদিল্লি? মোদী সরকার বাংলাদেশের নতুন শাসকদের কথা মেনে নেবে? এটা যেমন বড় প্রশ্ন, তেমনই জানা জরুরি হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ? বা চাওয়ার এক্তিয়ার আছে কী?

দেখুন প্রিয় দর্শক, বিএনপি সহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিন্তু, এই ধরনের একটা দাবি যে জানানো হতে পারে, সেই ইঙ্গিত অলরেডি দিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারের শীর্ষ কর্তারা। এক্ষেত্রে যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, সেটা আসলে কী? জানিয়ে রাখি, অনেক ক্ষেত্রেই কোনও একটা দেশের আইনে অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত কোনও ব্যক্তি, বন্দীত্ব এড়াতে অন্য কোনও দেশে আশ্রয় নেয়। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে প্রথম দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দুই দেশের মধ্যে অনেক সময়ই চুক্তি বা ডিল সাইন করা হয়। একেই বলে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি।

একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে, এই ধরনের চুক্তির আওতায়, পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী তথা হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে ব্রিটেন থেকে ভারতে ফেরানোর আবেদন করেছে নয়া দিল্লি। এই একই ধরনের চুক্তি কিন্তু রয়েছে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যেও। তখনও নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসেননি। ২০১৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং এবং বাংলাদেশের শেখ হাসিনা। সেই সময়ই দুই দেশের মধ্যে অপরাধী হস্তান্তরের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে এবং বাংলাদেশের সেই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তবে, এরও এক বছর আগে থেকেই এই প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন দুই দেশের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ ও দীপু মণি। যে চুক্তি অনুযায়ী, ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তর করবে ভারত ও বাংলাদেশ। অতএব এটা স্পষ্ট বাংলাদেশ চাইলে এরকম কোনো স্টেপ নিতেই পারে। কিন্তু এরকম দাবি এলে ভারত কী তা পূরণ করতে বাধ্য? সেটাও বড় বিষয়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা, তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতকে অনুরোধ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রুজু হচ্ছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রক যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলেই তিনি ভারতকে অবশ্যই অনুরোধ করবেন। এবং তাঁর মতে, “দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির কারণেই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

কিন্তু এর বাইরেও হিসেব আছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনিতেই বিভিন্ন দিক থেকে সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ। তার উপর হাসিনাকে ফেরত চাইলে দুই দেশের সম্পর্কর ক্ষতি হতে পারে। সেই ঝুঁকি সম্ভবত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেবে না বা নিতে চাইবে না। কিন্তু যদি চায়? তাহলে, হাসিনার পাশে দাঁড়াবে কী করে ভারত? বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরানোর দাবি জানালে, কূটনৈতিক কারণে ভারতের পক্ষে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হবে না। সেই ক্ষেত্রে রাস্তা দুটো। কোনও টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়া। আসলে, এই ধরনের চুক্তিগুলিতে অনেক আইনের ফাঁক থাকে। প্রত্যর্পন চুক্তিতেও এমন কতগুলো বিধান বা শর্ত আছে, যার যে কোনোটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে নয়া দিল্লি। দ্বিতীয় পথ, বিভিন্ন আইনি জটিলতা বা মারপ্যাঁচ দেখিয়ে বিষয়টিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা।

আর এরইমধ্যে শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে অন্য কোনও দেশের পাড়ি দিলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে দিল্লির আর কোনও দায় থাকবে না। যদিও পুরোটাই স্পষ্ট হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।