নিউ ইয়র্ক: মুম্বইয়ে ২৬/১১-র হামলার ১২ বছর পর উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করল আমেরিকা। মুম্বইয়ের হামলার জন্য লস্কর-ই-তাইবার সদস্য সাজিদ মীরকে গ্রেপ্তার বা দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যাবতীয় তথ্যের পুরস্কার হিসেবে ৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পুরষ্কারের ঘোষণা করেছে তারা। মার্কিন রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস প্রোগ্রামের জারি করা একটি সরকারি বিবৃতি অনুসারে, “২০০৮ সালের নভেম্বরে জঙ্গি হামলায় জড়িত থাকার জন্য ভারতের তরফে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তাইবার সিনিয়র সদস্য সাজিদ মীরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে সাজিদ মীরের যে কোনও দেশে গ্রেপ্তার বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তথ্য প্রদানের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পুরষ্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে।”
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান-ভিত্তিক সঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা দ্বারা প্রশিক্ষিত ১০ জন সন্ত্রাসী মুম্বইয়ে একের পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছিল। তাজমহল হোটেল, ওবেরয় হোটেল, লিওপোল্ড ক্যাফে, নরিমন (চাবাদ) বাড়ি, এবং ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে হামলা চালিয়েছিল তারা। জঙ্গিরা মোট ১৬৬ জনকে হত্যা করেছিল। এই ভয়াবহ আক্রমণে নয় জন সঙ্গি খতম হয়। শুধু বেঁচে ছিল আজমল আমির কাসভ। ধরা পড়ার পর বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয়। ১১ নভেম্বর, ২০১২ সালে কাসভকে পুনের ইয়ারওয়াদা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে, “সাজিদ মীর মুম্বই হামলার জন্য লস্কর-ই-তইবার অপারেশন ম্যানেজার ছিল। এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং মৃত্যু কার্যকর করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল সে। ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল মীরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেলা আদালত, ইলিনয়ের উত্তর জেলা, পূর্ব বিভাগে (শিকাগো, ইলিনয়) অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিদেশী সরকারের সম্পত্তিতে আঘাত করার ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসবাদীদে সহায়তা প্রদান, আমেরিকার বাইরে আমেরিকার নাগরিকদের হত্যা ও হত্যায় সহায়তা এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জায়গাগুলিতে বোমা ফেলার অভিযোগ আনা হয়। আক্রমণ চলাকালীন মীর আক্রমণকারীদের হত্যা, আগুন জ্বালানো ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছিল। বন্দী হামলাকারীর মুক্তি নিয়ে রফা করতেও চেয়েছিল। মীরের গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল ২০১১ সালের ২২ শে এপ্রিল। ২০১২ সালে মীরকে এফবিআইয়ের সর্বাধিক ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী তালিকায় যুক্ত করা হয়।”
এতে আরও যোগ করা হয়েছে যে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট ট্রেজারি বিভাগ মীরকে এলইটির নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত করার জন্য মনোনীত করে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মতে, ২০০৫ সাল পর্যন্ত মীর বিদেশী নিয়োগ, অর্থ পাচার এবং পরিচালনা সংক্রান্ত পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া অপারেটরদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এলইটিকে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তকমা দেয়। তবে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে অপরাধ অস্বীকার করে চলেছে। এখনও ভারত শেয়ার করা একাধিক তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে সাত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। বর্তমানে এর সামান্য অগ্রগতি হলেও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণের পর্যাপ্ততা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।