মস্কো: প্রায় এক মাস হতে চলল, ক্রমাগত রক্ত ঝরছে ইউক্রেনে৷ আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে চলেছে মৃত্যু মিছিল৷ বারবার বৈঠকে বসেও মেলেনি রফা সূত্র৷ পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে৷ কিন্তু, যুদ্ধ বিরতির নামগন্ধ নেই। কবে থামবে যুদ্ধ? বিশ্ব জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন আমজনতার। আদৌ কি সেই সম্ভাবনা রয়েছে? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কী হতে চলেছে?
আরও পড়ুন- পর পর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল পাকিস্তানের শিয়ালকোটের সেনা ঘাঁটি, অস্ত্রাগারে আগুন
যে কারণগুলিকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের সূচনা, তার ফয়সালা হয়ে গেলেই সংঘর্ষে ইতি পরাটাই দস্তুর৷ এর জন্যে জন্য হয়তো যুযুধান দু’পক্ষকে বারবার আলোচনার টেবিলে বসতে হতে পারে। অথবা রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে উঠে আসতে পারে সমাধানসূত্র। তত্ত্বগত ভাবে একাথা সত্যি হলেও, বিষয়টি কিন্তু ততটাও সহজ নয়। এর প্রমাণ মিলেছে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া বা লিবিয়ার সংঘর্ষে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিও কি সেই পথেই এগোচ্ছে? গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর বেলা আচমকা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযানের কথা ঘোষণা করেন। শুরু হয় আক্রমণ। পুতিনের দাবি, প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির জমানায় ইউক্রেনের মাটিতে ‘গণহত্যা’ রুখতেই এই হামলা। আর জেলেনস্কি সরকারের এই ‘কুকর্মে’র সঙ্গী আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী৷ পুতিন কোনও ভাবেই চান না ইউক্রেন ন্যাটো গোষ্ঠীর সদস্য হোক।
তবে এটুকুই নয়, ইউক্রেন আক্রমণের পিছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের রুশপন্থী ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক (একত্রে বলা হয় ডনবাস)-কে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন পুতিন। জেলেনস্কির কাছেও একই দাবি রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাতছাড়া হওয়া ক্রাইমিয়াকে নিজের দেশের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন পুতিন।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হল ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক৷ যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে পুতিনের৷ কারণ, ইউক্রেন ন্যাটো গোষ্ঠীর সদস্য হলেই আমেরিকা এবং ন্যাটোর অন্তর্গত দেশগুলি রাশিয়াকে ভৌগোলিক ভাবে ঘিরে ফেলবে। সেই কারণেই মৌখিক চুক্তি অগ্রাহ্য করে ইউক্রেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে পুতিনের দাবি।
প্রায় এক মাস ধরে যে যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনের মাটিতে তাতে কম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমেরিকার একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার ৭,০০০ সেনার মৃত্যু হয়েছে৷ আহত ১৪ হাজারেরও বেশি। সমান ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেন৷ রিপোর্ট বলছে, ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ২,৮৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ৩,৭০০ জন আহত। এ ছাড়াও ৫৭২ জনকে বন্দি বানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের ৩০ লক্ষ মানুষ গৃহহারা৷ দেশ ছেড়ে তাঁরা এখন অন্য দেশের আশ্রিত৷
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর থেকে বহুগুণ শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও এইভ যুদ্ধে বিশেষ ফায়দা করতে পারেনি রাশিয়া। খারসেন, খারকিভ, মারিয়ুপুল, সামি-র মতো একাধিক শহর ঘিরে রেখেছে পুতিনের ফৌজ৷ তবে খারসেনের দখল ছাড়া রুশ বাহিনীর হাতে আর কোনও সাফল্য নেই৷
এদিকে, যুদ্ধ পরিস্থিতি ইউরোপীয় দেশগুলি এবং আমেরিকার আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়েছে রাশিয়া। সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালিসিস (সিইপিএ)-র স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ-এর অবসরপ্রাপ্ত লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল বেন হেজেস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যে ভাবে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বোঝা বাড়ছে, তাতে খুব শীঘ্রই ১৫ হাজার কোটি ডলার বিদেশি মুদ্রা ঋণখেলাপি হতে পারে রাশিয়ার। তা ছাড়া, রাশিয়ার অন্দরেও পুতিনের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টি বাড়ছে।’’
অন্যদিকে, যুদ্ধে সরাসরি ইউক্রেনের মদত করতে এগিয়ে আসেনি ন্যাটো বাহিনী৷ তবে সদস্য দেশগুলি সামরিক সাহায্য পাঠিয়ে চলেছে৷ যা নিয়ে ন্যাটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মেছে জেলেনস্কির মনেও৷ প্রথমে ন্যাটো গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও, এখন আর ন্যাটোর সঙ্গে হতে চায় না ইউক্রেন৷ এদিকে, যুদ্ধের চতুর্থ সপ্তাহে পৌঁছে সুর নরম করেছে দুই পক্ষই৷ ডনবাস নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বসতে রাজি হয়েছেন জেলেনস্কি৷ অন্যদিকে, রাশিয়া বুঝে গিয়েছে কিয়েভের দখল নেওয়া প্রায় অসম্ভব৷
কবে শেষ হবে যুদ্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনও হতে পারে আক্রমণের শক্তি বাড়িয়ে কিয়েভের দখল নিল রাশিয়া৷ সেক্ষেত্রে ইউক্রেনে পুতুল সরকার (পাপেট রিজম) গড়ে তুলতে পারবে মস্কো৷ নতুবা যুদ্ধ থামিয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারে দুই পক্ষ৷ হতে পারে যুদ্ধে ইতি টানতে ডনেৎস্ক এবং লুহানস্কের পাশাপাশি খারসেনকেও স্বাধীন বলে মেনে নিল ইউক্রেন। আবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে রাশিয়া৷ আঘাত হানতে পারে পড়শি পোল্যান্ডে৷ এর ফলে সরাসরি যুদ্ধে নামতে পারে ন্যাটো বাহিনী৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>