হাজার শিশুর ঘাম-রক্তে শৈশব গিলছে ‘ডার্ক চকলেট’

টোগো: আনন্দ এবং দুঃখ সমানভাবে সকলের সাথে ভাগ করে নিয়ে মনকে সর্বদা তরতাজা রাখতে চকলেট৷ মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে চকলেট৷ সর্বোপরি হার্ট ভালো থাকে চকলেট খেলে৷ অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর মনের গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে মিষ্টি সুস্বাদু চকলেটে৷ তৃতীয় বিশ্বের যুগে চকলেট নিয়ে এমনই সব তথ্য উঠে আসছে গবেষণায়৷ গভীর হচ্ছে চকলেট প্রীতি৷ কিন্তু এই

হাজার শিশুর ঘাম-রক্তে শৈশব গিলছে ‘ডার্ক চকলেট’

টোগো: আনন্দ এবং দুঃখ সমানভাবে সকলের সাথে ভাগ করে নিয়ে মনকে সর্বদা তরতাজা রাখতে চকলেট৷ মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে চকলেট৷ সর্বোপরি হার্ট ভালো থাকে চকলেট খেলে৷ অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর মনের গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে মিষ্টি সুস্বাদু চকলেটে৷ তৃতীয় বিশ্বের যুগে চকলেট নিয়ে এমনই সব তথ্য উঠে আসছে গবেষণায়৷ গভীর হচ্ছে চকলেট প্রীতি৷ কিন্তু এই চকলেটের নেপথ্যে যে চরমতম গোপনীয়তা লুকিয়ে আছে তা জনতে পারলে নিমেষেই উধাও হবে চকলেট অবসেশন৷ চকলেটের স্বাদে মিশে যাবে রাগ, দুঃখ, ঘৃণা,তিক্ততা এমনই আরও অনেক কিছু৷

কারণ এই চকলেট তৈরির সঙ্গে জুড়ে আছে এমনই নির্মম শিশুশ্রমের কাহিনী যা আধুনিক বিশ্বের সামনে এক ভয়ঙ্কর প্রশ্নচিহ্ন৷ সারাবিশ্বের মানুষের চাহিদা মেটাতে ৩ কোটি টনেরও বেশি কোকো বা কোকোয়া বীজের প্রয়োজন পড়ে৷ ডার্ক চকোলেটের মূল উপাদন কোকোর ৭০ শতাংশই উৎপাদন হয় পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্ট আর ঘানায়৷ এখানকার কোকো ফার্মগুলিতে প্রতিদিন অন্তত ৮ লাখ শৈশবের সমাধি হয়৷ দাসত্ব প্রথার আড়ালে হারিয়ে যায় শৈশবের আদর, আবদার আর সুন্দর স্বপ্নগুলো৷

কোকোফার্মগুলির জন্য শিশুদের আমদানি হয় মূলত প্রতিবেশী দারিদ্রপীড়িত দেশগুলি থেকে৷ যার মধ্যে অন্যতম মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজেরিয়া, বেনিন, টোগো, নাইজারের-র মত দেশগুলি৷ পেটের খিদে মেটাতে পরিবারের লোকেরাই ছোট ছোট শিশুদের তুলে দেয় বড় বড় কোকো ফার্মের মালিকদের হাতে৷ এর পেছনে অবশ্য নানান প্রলোভনও কাজ করে৷ দারিদ্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর যে সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করেই দুমুঠো অন্ন সংস্থান করতে হয়৷

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রচেষ্টায় পশ্চিম আফ্রিকার কোকো ফার্মগুলিতে শিশুশ্রমের যথেচ্ছ অপব্যবহার এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্রিতদাস প্রথার কথাও প্রকাশ করেছে৷ এরপর থেকেই কোকো ইন্ডাস্ট্রিগুলি গোপনীয়তা রক্ষা করতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷ বিশ্বের নামজাদা চকলেট কোম্পানিগুলি যেমন হারশি’স, মার্শ, নেপালেও এই কোকো ফার্মগুলির নির্মম সত্যিগুলি প্রকাশ্যে এনেছে৷

হাজার শিশুর ঘাম-রক্তে শৈশব গিলছে ‘ডার্ক চকলেট’

এখানে যে শিশুরা কাজ করে তাদের বয়স ১২থেকে১৬-র মধ্যে৷ তবে এর থেকে কম বয়সীরাও আছে৷ এই শিশুদের মধ্যে ৪০শতাংশই মেয়ে৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করে কোকো ফার্মের শিশুরা৷ খাদ্য বলতে প্রায়দিনই জোটে সেদ্ধ ভুট্টা আর কলা৷ রাতে দরজা জানালাহীন ছোট ছোট ঘরে ফেলে রাখা হয় শেকল দিয়ে বেঁধে৷ যাতে অত্যাচারের ভয়ে তারা পালাতে না পারে৷ পালাতে গিয়ে ধরা পড়লে তো কথাই নেই৷ চলে অকথ্য অত্যাচার৷ আন্তর্জাতিক শিশু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে৷

হাজার শিশুর ঘাম-রক্তে শৈশব গিলছে ‘ডার্ক চকলেট’

রামদা’র মতবড় বড় ধাঁরাল ম্যাশেটে তুলে দেওয়া হয় এই সব শিশুদের হাতে৷ এর সাহায্যই কোকো পড(যার ভিতরে থাকে কোকো বীজ) গাছ কেটে নামিয়ে বস্তায় জড়ো করে ওরা৷ যে বস্তাগুলোর ওজন হয় অন্তত ১০০ কেজি৷ এরপর ওই বস্তা ওদেরকেই বয়ে নিয়ে যেতে হয়৷ ধারালো ম্যাশেটের আঘাতের দাগ ছোট ছোট শরীর জুড়ে৷ এই অমানুষিক খাটনি করে একটু বিশ্রাম নিতে গেলেই জোটে বেধরক পিটুনি৷ ছোট ছোট শ্রমিক মেয়েদের যৌনলালসার শিকার হতে হয় হামেশাই৷ পরিশ্রম করে জীবন চলে কিন্তু একে জীবিকা বলা যায় কি? কারন শ্রমের পরিবর্তে মেলেনা কোনো মজুরি৷ এই শিশুদের শৈশব থেকে যৌবন তারপরে হয়তোবা পুরো জীবনটাই কেটে যায় এই কোকো ফার্মের ক্রীতদাস হিসেবে৷

হাজার শিশুর ঘাম-রক্তে শৈশব গিলছে ‘ডার্ক চকলেট’

২০০১ সালেই আইএলও (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন) এর সাথে সমস্ত আন্তর্জাতিক মানের চকলেট প্রস্তুতকারী সংস্থা গুলির এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যে কোকো ফার্ম থেকে কোকোবিন নেওয়ার পাশাপাশি শিশুশ্রমের ব্যবহারের ওপরেও নজরদারি করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই৷ এই চুক্তি হারকিন এঞ্জেল প্রোটোকল বা কোকো প্রোটোকল নামে পরিচিত৷ চুক্তি অনুযায়ী কোন উৎপাদনকারী বা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান শিশুশ্রমিক ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে৷ কিন্তু শিশুশ্রম বন্ধ করলে যে কম দামে কোকো পাওয়া যাবে না! কিন্তু দেশের সরকারি মদত থাকায় পুরো বিষয়টাই সেখানে ওপেন সিক্রেটের মতো৷

এতকিছু জানার পর চকলেটের প্রতি অনুভূতির থেকে ওই নিরীহ শিশুদের প্রতি সহানুভূতি জন্মাবে সেটাই স্বাভাবিক৷ ভাবুন একবার যে ছোট ছোট শিশুরা জীবনপণ করে চকলেটের উপাদান জোগান দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটায় তারা নিজেরাই জানেনা চকলেটের স্বাদ কেমন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *