দক্ষিণ আমেরিকা: চিলির আতাকামা মরুভূমির নাম ভূগোল বইতে পড়ে থাকবেন। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল হিসাবে খ্যাত এই জায়গা। ৫০ বছরেও একবার বৃষ্টি হয় না এখানে। প্রাণের অস্তিত্ব থাকা যেখানে প্রায় অসম্ভব, সেখানেই বেঁচে থাকে দক্ষিণ আমেরিকার উট প্রজাতির ‘গুয়ানাকো’ প্রাণীরা।
প্রতিদিন বেঁচে থাকবার জন্য এই ধরনের প্রাণীদের সাধারণ ভাবেই দরকার হয় পানীয় জল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় দিনের পুরো সময়টাই শুষ্ক হয় এখানে। এখানকার বাতাস এতটাই উত্তপ্ত যে মাটি থেকে সমস্ত জলই শুষে নেয়। তাহলে তারা তাদের চাহিদার জল পায় কোথা থেকে? এ রহস্য লুকিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের প্রবাহিত বাতাসের মধ্যে। গুয়ানাকোরা ক্যাকটাসের ফুল থেকে জল পান করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় শীতল জল জলীয় বাষ্পযুক্ত গরম বাতাসকে ক্রমশ ঠাণ্ডা করে তোলে। এই সময়েই সমুদ্রে প্রবাহিত বাতাস শীতল বাতাসকে পার্শ্ববর্তী ভূমির দিকে ঠেলে দেয়। ফলে সমুদ্র নিকটবর্তী মরুভূমি ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে। মরুভূমির ক্যাকটাসগুলি এই সময়ে ভিজে ওঠে শিশিরে। এই ঘটনা প্রত্যেকদিন নিয়মমাফিক হয়ে থাকে। রোজ এই একই নিয়মের ঘোরাফেরায় ওই ক্যাকটাসের ওপর একাধিক লাইকেন সৃষ্টি হয়। এগুলি সাধারণত স্পঞ্জের মতো হয়ে থাকে। তাই এই লাইকেন জল ধারণ করতে সক্ষম। বৃষ্টিহীন মরুরাজ্যে এই জলই একমাত্র প্রাণ বাঁচায় গুয়ানাকো সমেত একাধিক প্রজাতির প্রাণীর।
এই কুয়াশাই আতাকামার জীব বৈচিত্র্যের একমাত্র বেঁচে থাকার উপায়। মরুভূমির ভিতরের অংশের তাপমাত্রা এতটাই উত্তপ্ত যে সেখানে এই ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হতে পারে না। তাই, এই মরুভূমির শুধুমাত্র সমুদ্র তীরবর্তী অংশেই জীবনের খোঁজ মেলে। ওই ঠান্ডা বাতাস না থাকলে এই অংশও জীব-শূন্য হয়ে পড়বে। প্রাণিকুলের মধ্যে গুয়ানাকোই সবচেয়ে বেশি এই জলের ব্যবহার করে থাকে। তবে সব সময়ে এই কুয়াশা এখানে বিরাজ করে না। সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দিন যতই বাড়তে থাকে ততই এখানের উষ্ণতা বাড়তে থাকে। তাই এই কুয়াশাও কেটে যায় ভোর হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। কিন্তু ওইটুকু সময়ই জীবন দান করে এই প্রাণীদের। শুধুমাত্র জলের অভাবেই এই মরুভূমি অনুর্বর। কুয়াশা কেটে গেলেই মরুভূমি আবার শুকিয়ে যায়। কুয়াশার বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় এখানে বয়ে যায় জীবনের বন্যা।