Who are the Taliban? কী ভাবে তৈরি হল তালিবান? উৎপত্তি কোথায়? কী বলছে ইতিহাস?

Who are the Taliban? কী ভাবে তৈরি হল তালিবান? উৎপত্তি কোথায়? কী বলছে ইতিহাস?

cc652179f0a02008b7059340b9c00c5d

কাবুল: তালিবান গোষ্ঠির নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তান। ঠিক যেমন ছিল ২০ বছর আগে। ২০০১ সালে যখন মার্কিন সেনাবাহিনী ঢোকে; তখনও ক্ষমতায় ছিল তালিবান। তখন দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত এক যুদ্ধের মাধ্যমে সেই সময় আফগানিস্তান থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তালিবানকে। তবে ২০ বছর পর, নতুন করে সংগঠিত হয়ে আবারও আফগানিস্তাণের দখল নিয়েছে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। মার্কিন সৈন্য এখনও পুরোপুরি দেশ ছেড়ে যায় নি, কিন্তু তার আগেই বদলে গিয়েছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি।  যে তালিবানি বর্বরতা দেখে শিউরে উঠছে দেশ, কীভাবে গড়ে উঠেছিল এই সংগঠন? নেপথ্যে রয়েছে কারা? জানতে হলে ফিরে যেতে হবে বেশ কয়েকবছর পিছনে৷

তালিবানের উৎপত্তি: পশতু ভাষায় তালিবান শব্দের অর্থ হল- ‘ছাত্র’।  আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্যরা পিছু হটতেই ১৯৯০ সালের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানে এই তালিবান আন্দোলনের জন্ম হয়। এই আন্দোলনে মূলত পশতুন অর্থাৎ পশতুভাষীদের প্রাধান্য রয়েছে। মনে করা হয়, মাদ্রাসাগুলোতেই প্রথমে তালিবান গোষ্ঠি সংগঠিত হয়। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান সীমান্তের দু’দিকেই বিস্তীর্ণ পশতুন অধ্যূষিত অঞ্চল রয়েছে। তালিবানরা এসব অঞ্চলে খুব দ্রুতই প্রভাবশালী হয়ে উঠে।  তাঁদের লক্ষ্য, ক্ষমতায় এলে দেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং কঠোর শরিয়া শাসন জারি করবে।

শোনা যায়, সোভিয়েতরা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মুজাহিদীনদের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব শুরু হয়।  তাদের বাড়াবাড়ি, দুর্নীতি, নৈরাজ্যকে আফগানের মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছিল না। এরকম অবস্থায় দেশে শান্তি স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে আফগানিস্তান দখলে নামে তালেবান।  দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে খুব দ্রুত তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করে এই গোষ্ঠী। ১৯৯৫ সালে ইরান সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাতের দখল নেয় তালিবান।  এর পরের বছর অর্থাৎ, ১৯৯৬ সালে কাবুল ও কান্দাহার দখল করে তারা। প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দিন রাব্বানির সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে জঙ্গিগোষ্ঠী। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে মৌলবাদী ইসলামিক শক্তি হিসেবে শাসন চালিয়েছিল তালিবান। প্রথমদিকে আফগানিস্তানের মানুষও সাধারণভাবে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। এই জনপ্রিয়তার মূলে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে: যেমন- দেশের দুর্নীতি দমন করা। আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। তাদের নিয়ন্ত্রিত রাস্তা দিয়ে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছিল তালিবানরা।

কিন্তু, শরিয়া শাসনের নামে তালিবানদের আগ্রাসনে ধীরে ধীরে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয় আফগানিস্তানে। বিশেষ করে  দুর্বিষহ হয়ে ওঠে আফগান নারীদের জীবন। পুরুষদের দাড়ি রাখা ও নারীদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।  বন্ধ করে দেওয়া হয় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া। দেশে টেলিভিশন, সংগীত, সিনেমাও নিষিদ্ধ করে তারা। তালিবানের বিরুদ্ধে  বহুবার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের অভিযোগ রয়েছে। কট্টর এই আন্দোলন, আনুশাসনের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক নাম, নেতৃত্বে রয়েছেন-

তালিবান নেতৃত্বের পরিকাঠামো:

বর্তমানে তালেবানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতার দায়িত্বে রয়েছেন হিবাতুল্লাহ আকুন্দজাদা। তালিবানের বিচারব্যবস্থার তদারকি করেন মোল্লা আবদুল হাকিম রাজনৈতিক ডেপুটি পদে রয়েছেন আবদুল গনি বরাদর ডেপুটি পদে রয়েছেন মহম্মদ ইয়াকুব (তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে) হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি রয়েছেন ডেপুটি পদে। এছাড়াও, ২৬ সদস্যের এক নেতৃত্ব পারিষদ রয়েছে যারা সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

পাকিস্তানের ভূমিকা?  

তালিবানের নেপথ্য কারিগর হিসেবে বরাবর পাকিস্তানের নাম উঠে আসে। এর অন্যতম কারণ, শুরুর দিকে যে সমস্ত আফগানরা তালিবান আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন; তারা সবাই পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে, আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল যে ৩ টি দেশ তাদের মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। অপর দুটি হল সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব এমিরেটস।

একটা সময় পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের একাধিক অঞ্চলে তালিবানি  নিয়ন্ত্রণ ছিল।  একাধিক হামলা করে পাকিস্তানকেও অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করে জঙ্গিগোষ্ঠী। ২০১২ সালে, পাকিস্তানের মিনগোরা শহরে স্কুলছাত্রী মালালা ইউসুফজাইয়কে গুলি করে জঙ্গীরা। এরপর পেশাওয়ারে এক স্কুলে হামলা চালিয়ে হত্যালীলা চালায় তালিবান।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল কায়েদার হামলার পর হামলার মূল  চক্রী ওসামা বিন লাদেন এবং তার  আন্দোলনকে তালিবান আশ্রয় দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। তারপরই, পাল্টে যেতে শুরু করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি- লাদেনের খোঁজে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট আফগানিস্তান আক্রমণ  শুরু করে। চাপে পড়ে তৎকালীন নেতা মোল্লাহ মোহাম্মদ ওমর, অন্যান্য সিনিয়র নেতা এবং ওসামা বিন লাদেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০০১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তালিবানের পতন ঘটে আফগানিস্তানে।  তবে, অনেক সিনিয়র তালিবান নেতা পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে থেকে তালিবানকে পরিচালিত করতেন বলে জানা যায়।

বহু বছর ধরে  আলোচনার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। শর্ত ছিল-

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং তালেবানও আর তাদের বাহিনীর ওপর কোনও হামলা চালাবে না।  আল কায়েদা কিংবা অন্য কোন জঙ্গী সংগঠনকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আশ্রয় দেবে না তালিবান। এই চুক্তির পরবর্তী দিনগুলোতেও আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ রাখে নি জঙ্গিগোষ্ঠী।  তারই মধ্যে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালের এপ্রিলে ঘোষণা করেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা। সেই ঘোষণার মাস খানেক যেতে না যেতেই কাবুল দখলের লক্ষ্য নিয়ে অভিযানে নামে তালিবান।  ১৫ অগাস্ট, আফগানিস্তানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আশরফ গনিকে সরিয়ে কাবুলের মসনদ দখল করে তালিবান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *