ওয়াশিংটন: জো বাইডেন। সম্ভবত এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত নাম। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন ডেমোক্রেটিক বাইডেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য কাজ করার শপথও নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। একসঙ্গে বিভেদহীন নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু রাজনীতির বাইরে, মানুষ হিসেবে কেমন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট? কী তাঁর জীবন কাহিনী? আজ সাফল্যের শিখরে উঠেছেন যিনি, জীবনের একটা পর্যায়ে কেন তিনি আত্মহত্যাতে মুক্তি খুঁজতে চেয়েছিলেন? কোন জাদু মন্ত্রেই বা সেই পর্যায় পেরিয়ে আজকের সাফল্য?
ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পরবর্তীতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে টিভির পর্দায় এত দিনে যে ৭৮ বছরের বয়স্ক হাসি মুখটা চেনা হয়ে গেছে মানুষের, আদতে তার পিছনে লুকিয়ে আছে গভীর ক্ষত। রাজনীতির সেই রঙিন পর্দা সরিয়ে বাইডেনের ব্যক্তি মানসে উঁকি মারতে গেলে পিছিয়ে যেতে হয় ৪৮টা বছর। আইনজীবী হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করলেও দ্রুত রাজনীতিতে যোগ দেন বাইডেন।কনিষ্ঠতম হিসেবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সেনেটর নিযুক্ত হন তিনি। কিন্তু সাফল্যের খুশি বেশি দিন স্থায়ী হয় নি।
মাত্র একমাসের মাথায় ক্রিসমাসের কেনাকাটা করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান বাইডেনের স্ত্রী ও শিশুকন্যা। পায়ের তলার মাটি সরে যায় বছর ত্রিশের যুবকের। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ছোটো ছোটো দুই ছেলের দেখাশোনা করতে করতেই জীবনের অন্ধকারতম সময়টার সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সেই সময় জীবনে প্রথমবার আমি বুঝেছিলাম কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে কিভাবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।” কিন্তু দুই ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর হার মেনে নেওয়া হয় না বাইডেনের।
ভাগ্যের পরিহাস অবশ্য এখানেই শেষ হয় না। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাঁর ছেলে বো বাইডেন মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। নিজের ভাঙাচোরা মনোবলকে গুছিয়ে নিতে নিতে বাইডেন বলেন, “পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ, আমাদের থেকেও বেশি যন্ত্রণায় আছেন। হয়তো তাঁদের জীবনে বেঁচে থাকার কারণ আমাদের থেকেও কম, কিন্তু তবু তাঁরা ওঠেন, প্রত্যেক সকালে, প্রত্যেক দিন। তাঁরা একটার পর আরেকটা পা বাড়ান সামনের দিকে, তাঁরা এগিয়ে যান।”
অন্ধকারতম অতীতের স্মৃতি থেকেই ভবিষ্যৎ সাফল্যের প্রেরণা খুঁজে নেন ৪৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও তাই ভুলে যান না অতীতের লড়াই। আর তাই হয়তো বৃদ্ধ ওই হাসিমুখে আমেরিকার সঙ্গে সঙ্গে আরো একবার স্বপ্ন দেখেন গোটা বিশ্বের মানুষ।