নয়াদিল্লি: রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দারা যখন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এল তখন গোটা বিশ্ব সহানুভূতির চোখে দেখলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। প্রায় সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী সেই সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। শরনার্থীদের জন্য সেদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ক্যাম্পও করে দেওয়া হয়। গত দুবছরে সেই ক্যাম্পে যে কতশত শিশুর জন্ম হয়েছে তার কোনও লেখাজোখা নেই। দেশ থেকে বাঁচার জন্য পালিয়েছিল, এরপর প্রাথমিক চাহিদা মেটার পর অন্যতম চাহিদা হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষা। কিন্তু এই মৌলিকা চাহিদা মেটাতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ। অবশ্যই শরনার্থী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পাবে তবে তা তাদের ক্যাম্পেই, মোটেই বাংলাদেশের কোনও স্কুলে নয়। কেননা এর জেরে স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, প্রথমে দেশ থেকে এসে অনেক বাচ্চাই এখানকার সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ পয়েছিল, কিন্তু ইউনিসেফের নির্দেশ মাফিক সম্প্রতি সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকের অভিয়োগ, বেশকিছু রোহিঙ্গা বেআইনিভাবে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের নকল প্রমাণপত্রও জোগার করেছে দুর্নীতিপরয়াণ নেতাদের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।এর জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে গোটা দেশ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যেকেই যে ভাল এমন মনে করার কিছু নেই। অনেকেই এদেশে এসে ড্রাগ পাচার।চোরাচালানে হাত পাকিয়েছে যা বাংলাদেশি জন্য ভয়াবহ তো বটেই।
এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যাচার মায়ানমারে নতুন কিছু নয়। বেশকিছু বছর ধরেই তা চলছিল, তাই অনেক আগেই দেশ ছেড়ে অত্যাচারিতদের অনেকে এখানে পালিয়ে আসে।সেইসব পরিবারের বেশ পরবর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশেই জন্মেছে, তারা জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক এখানকার স্কুলে পড়াশোনা করেছে।এদিকে ইউনিসেফের নীতি কার্যকর হওয়ার পর তারাও স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ হারিয়েছে।এমনই এক কিশোর নিজের নাম জানাতে কিছুতেই রাজি নয়, তার একটাই ইচ্ছে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে দেশের শরনার্থীদের সেবা করবে।
তবে স্কুলে পড়ার সুযোগ হারিয়ে তাদের বেশিরভাগই চোখে অন্ধকার দেখছে। তাদের দাবি বাংলাদেশ সরকার খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের সুযোগ দিলেও শিক্ষার সঠিক ব্যবস্থা দিতে নারাজ। আর শিক্ষা না পেলে তারা ভালমানুষ হতে পারবে না, তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে। তারা পড়তে চায়, তবে জানেনা সেই সুযোগ কীভাবে আসবে। কেননা ক্যাম্পের স্কুলে ঠিকঠাক বই নেই, না মায়ানমারের না বাংলাদেশের, তাই শিক্ষার হালও তেমন, অন্ধকার ঘুপচির মধ্যে পড়তেও ভাল লাগে না। স্থানীয় ছেলেমেটেরা যখন স্কুল ইউনিফর্ম পরে বাড়ি ফেরে তখন ক্যাম্পের পড়ুয়ারা নিতান্তই বুভুক্ষের মতো তাদের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।