ওয়াশিংটন: দক্ষিণ আমেরিকার, আর্কানসাস এলাকার নিউপোর্টের বাসিন্দা ২৩ বছরের চেস্টিটি প্যাটারসন। বিগত চার বছর ধরে রোজ একটি করে মেসেজ পাঠাতেন বাবাকে। সেই বাবাকে, চারবছর আগে যাকে চিরকালের মতো বিদায় জানিয়েছেন। বাবার এই অকাল মৃত্যু মন থেকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি চেস্টিটি। জীবনের সবথেকে প্রিয়, সবথেকে বড় অবলম্বন বাবার মৃত্যু তার জীবনে অসীম শূন্যতা তৈরি করে। বাবাকে ছাড়া তার জীবন প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে থাকে। জীবনের লড়াইটা আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে ওঠে, যখন চেস্টিটির শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। মনের শূন্যতা, শরীরের যন্ত্রণা সবকিছুর থেকে মুক্তি পেতে পরতিদিন বাবাকে লেখা তার মেসেজগুলোই ছিল একমাত্র অবলম্বন। তাই মৃত বাবার ফোন নম্বরে নিজের মনের কথা লিখে রোজ একটি করে মেসেজ করতেন।
জানতেন এর উত্তর আসবেনা কোনও দিন। তবুও মনের কথা যে বাবাকে জানিয়েছেন এটাই ছিল তার স্বান্তনা। জীবনে বিশেষ কোনও ঘটনা ঘটলে, দীর্ঘ হতো তার মেসেজ। যেমন চেস্টিটির গ্র্যাজুয়েট হওয়ার দিনটা। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে সম্পূর্ণ সূস্থ হয়ে ওঠেন যেদিন সেদিনও দীর্ঘ হয়েছিল বাবাকে লেখা তার মনের কথা। চেস্টিটি লিখেছিলেন, “চার বছর হয়ে গেল, তুমি নেই। কিন্তু আমার একটা দিনও পেরোয় না, যেদিন তোমায় মিস করি না। তোমার যখন আমায় সবচেয়ে দরকার ছিল, তখন তোমার পাশে থাকতে পারিনি, আমি সরি। কিন্তু একদিন নিশ্চয় আমরা একসঙ্গে বসে আমাদের ফেভারিট ম্যাচ দেখার সুযোগ পাব।”
বাস্তব আর কল্পনার মেলবন্ধনে এভাবেই জীবনের এক একটা দিন কাটছিল চেস্টিটির। কিন্তু এসব কিছুই ফিকে হয়ে গেল,চার বছর পরে হঠাৎ যেদিন বাবার নম্বর থেকে তার পাঠানো মেসেজের রিপ্লাই এল। কি এমন লেখা ছিল সেই মেসেজে?
অবাক বিস্ময়ে চেস্টিটি মেসেজ খুললেন। সেখানে লেখা ছিল “আমার নাম ব্র্যাড। আমি তোমার বাবা নই। কিন্তু রোজ তোমার মেসেজ পাই। ২০১৪ সালোর অগস্ট মাসে আমার মেয়ে মারা যায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায়। তার এক বছর পর থেকেই তোমার মেসেজ আসতে শুরু করে। এই মেসেজগুলোই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে। যখন তুমি মেসেজ করো, আমার মনে হয়, আমি ঈশ্বরের বার্তা পেলাম।”
হতবাক হয়ে যান চেস্টিটি। তাঁর মেসেজ যে বাবার কাছে পৌঁছচ্ছে না এ কথা জানতেন তিনি। কিন্তু তাঁর মেসেজ পেয়ে একজন সন্তানহারা বাবা নতুন করে বাঁচছেন, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। ব্র্যাডের ওই মেসেজে আরও লেখা ছিল, “আমি চার বছর ধরে তোমার প্রতিটা কথা শুনছি। আমি বোধহয় সবচেয়ে কাছ থেকে তোমায় বড় হয়ে উঠতে দেখছি।”
সম্পূর্ন অপরিচিত এই বাবা-মেয়ের কথা এই বার্তালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হতেই স্বভাবতই আবেগপ্রবণ হয়েছেন নেটিজেনরা। ব্র্যাড আরও লিখেছেন, “আমার সেই প্রথম দিন থেকেই খুব খুব ইচ্ছে করত, তোমায় রিপ্লাই দিই। কিন্তু আমি তোমার বিশ্বাস ভাঙতে চাইনি। তুমি নিশ্চয় তোমার বাবার জন্যই এগুলো পাঠাতে। কিন্তু এগুলো যে অন্য কেউ পড়ছে, তা জানলে হয়তো তোমার খারাপ লাগতে পারত।”