আজ বিকেল: স্ত্রী মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী, হাসপাতালের বেডেই তাঁকে বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়। ওই দম্পতির সংসারে নিজের বলতে আছে এক পোষ্য কুকুর। সেটি গৃহকত্রীর প্রাণের প্রিয়। নিঃস্বন্তান দম্পতির কাছে প্রায় মেয়ের আদরেই রয়েছে ৫০পাউন্ডের অস্ট্রেলিয়ান শেফার্ড। এদিকে অসুস্থতার কারণে ওই গৃহবধূ হাসপাতালে চলে গেলে প্রায় একা হয়ে পড়ে পোষ্য। কেননা স্ত্রীর দেখভালের জন্য বেশিরভাগ সময়টাই তাঁর স্বামীকে হাসপাতালে কাটাতে হয়। স্বভাবতই বাড়িতে একা শেফার্ড শুধু বোরই হত না, তারও মুহূর্ত কাটত মন খারাপকে সঙ্গী করে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এদিকে দিন যত যাচ্ছিল, সুস্থ হওয়ার বদলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ। প্রিয় কুকুরের জন্য তাঁরও মন খারাপ লেগে থাকত। স্ত্রী যে আর বাড়ি ফেরার নয়, বুঝে গিয়েছিলেন স্বামী। এদিকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল চত্বরে পশুর প্রবেশ নিষেধ। তাই চেয়েও স্ত্রীকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারছিলেন না। কিন্তু প্রিয়তমাকে আর কাঁহাতক দুঃখে রাখা যায়। তাই একটা বুদ্ধি আঁটলেন স্বামী।মরণাপন্ন স্ত্রীর কাছে প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে যেতে সুটকেসের শরণাপন্ন হলেন। সুটকেসের মধ্যে ৫০ পাউন্ডের শেফার্ডকে ভরে হাসপাতালে স্ত্রীকে রাখা ব্যক্তিগত কেবিনেই যাওয়া মনস্থির করেন। সুটকেসে ভরে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরও এড়ানো যাবে।
এরপর মন খারাপ করে বসে থাকা প্রিয় শেফার্ডকে বিষয়টি বোঝান। তাকে যে তার অনেকদিন না দেখা মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা বলা হয়। মায়ের কাছে যেতে তাকে যে বেশ কিছুক্ষণ সময় সুটকেস বন্দি হতে হবে তাও বলা হয়। একটু কষ্ট করেই সেই সময়টি তাকে কাটাতে হবে। প্রিয় পোষ্য মাকে দেখার আনন্দে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়,যেহেতু আত্মগোপন করে যাওয়া হচ্ছে তাই সেখানে গিয়ে সে যেন গলা থেকে কোনও রকম আওয়াজ না করে। এরপর সুটকেসে তুলে পোষ্যকে গাড়িতে রেখে আসেন। তবে সুটকেসের ঢাকনা খোলাই ছিল। গাড়ি থেকে নামার আগে ঢাকনা আটকে তাকে হাসপাতালের মধ্যে নিয়ে যান ওই ভদ্রলোক। নার্সদের বলেন,স্ত্রীর প্রিয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। নার্সরা সহাস্যে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলে তিনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। এরপর কেবিনের দরজা আটকে সুটকেসের ঢাকনা খুলতেই চুপচাপ সেখান থেকে বেরিয়ে গৃহবধূর বিছানায় গিয়ে বসে শেফার্ড। বাবার কথা ভোলেনি সে এতদিনের না দেখাতে অনেক অভিমান জমে থাকলেও গলা থেকে কোনও আওয়াজ করেনি। প্রায় মিনিট কুড়ি বাদে মায়ের ঘুম ভাঙলে দুজন দুজনেক দেখে ভীষণ খুশি হয়।
এরপর একঘণ্টা ধরে পরস্পরকে নিঃশব্দে জড়িয়ে ছিল তারা। এই আবেগঘন মুহূর্তে আচমকাই সেখানে চলে আসেন এক নার্স। মহিলার স্বামী তাঁকে দেখতে পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে যান। তবে ওই নার্স তাঁকে আশ্বাস দেন, কিছু বলবেন না। এরপর তাঁর স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়তেই শেফার্ডকে ফের সুটকেস বন্দি করে বাড়ি ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পরেই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এদিকে মায়ের চলে যাওয়া বুঝতে পারেনি প্রিয় পোষ্য। তাই বাবা যখনই ওই সুটকেসে হাত দিতেন, তখনই সে ভাবত এবার মায়ের কাছে যাওয়ার পালা এসেছে।