নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক বিপর্যয় করোনা সংক্রামণ রুখতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই সাধ্যমত ও মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কোভিড-১৯এর মত নাছোড় ভাইরাসকে বাগে আনতে খোঁজ চলছে একটি বিজ্ঞানসম্মত এবং কার্যকরী ভ্যাকসিনের। এই লক্ষ্যে চারটি দেশের গবেষকরা শীঘ্রই নতুন করোনভাইরাস সম্পর্কে একটি অপ্রচলিত পদ্ধতির ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করতে চলেছেন।
শতাব্দী প্রাচীন একটি ভ্যাকসিন যা যক্ষ্মার (টিবি) মত ব্যাকটিরিয়াজনিত রোগ ও মানুষের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারে। এই ভ্যাকসিন করোন ভাইরাসের সঙ্গে ভালভাবে লড়াই করতে পারে কিনা এবং সম্ভব্য সংক্রমণ সম্পূর্ণভাবে রোধ করতে পারে কিনা। পরিচিত এই ভ্যকসিনটির নাম নাম বিসিজি (ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুউরিন) । প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক এবং নার্সদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন গবেষণামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে, যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষের তুলনায় করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি বয়স্কদেরকেও এই তালিকায় রাখা হবে যারা সংক্রামিত হয়ে পড়লে গুরুতর অসুস্থতার বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষক দল চলতি সপ্তাহেই প্রথমবার এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে। তারা আটটি ডাচ হাসপাতালে ১০০০ জন চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীদের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবে। নেদারল্যান্ডের স্বাস্থ্য দপ্তর সুত্রের খবর, মুলত যাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাঁদের উপরেই প্রাথমিকভাবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হবে। কারণ, প্রতিদিন করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করা এবং এই বয়সে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে এদের মধ্যেই সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। তবে ফলাফল ভালো মনে হলে তা প্রয়োগ করা হবে সাধারণ মানুষের শরীরেও।
ভ্যাকসিনগ সাধারণত নির্দিষ্ট প্যাথোজেনের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া বাড়ায়, যেমন অ্যান্টিবডিগুলি যা এক ধরণের ভাইরাসকে আবদ্ধ করে এবং নিরপেক্ষ করে তবে অন্যকে নয়। তবে বিসিজি টিবি জীবাণু ব্যতীত অন্য রোগজীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার সক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ডেনিশ গবেষক পিটার আবি এবং ক্রিস্টিন স্টাবেল বেন বেশ কয়েক দশক ধরে প্রকাশিত ক্লিনিকাল ও পর্যবেক্ষণ গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে তার প্রথম বছরে ভাইরাস সহ কোনও পরিচিত রোগজীবাণুর প্রায় ৩০% সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তবে, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ২০১৪ সালে এক পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোয় যে বিসিজি শিশুদের মধ্যে সামগ্রিক মৃত্যুর হার কমালেও এর উপর খুব কম আস্থা রাখা যায়। বিসিজির সম্ভাব্য সুবিধাগুলি সম্পর্কে একটি । তবে ২০১৬ সালে তাদের পর্যালোচনা একটু বেশি ইতিবাচক ছিল।
তার পর থেকেই, রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রমাণগুলি শক্তিশালী হয়েছে এবং বিসিজি কীভাবে সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে তার খোঁজ করতে বেশ কয়েকটি গবেষকদল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় নেদারল্যান্ডসের (রেডবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে) পাশাপাশি আরো যে তিনটি দেশের গবেষকদল বিসিজি-র পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে চলেছে তারা হল গ্রীস (ইউনিভার্সিটি অফ এথেন্সে), অস্ট্রেলিয়া (ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন) ও কানাডা (ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টো)। এদিকে ভারতেও করোনা রুখতে এই টিকা পরীক্ষানিরীক্ষার চিন্তা ভাবনা চলছে। পরীক্ষামুলকভাবে এই টিকা প্রয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশের একটি বেসরকারি টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা।