তপন মল্লিক চৌধুরী: মরণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির কর্মসূচি চলছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সবাইকে পিছনে ফেলে সাফল্যের চূড়ায় উঠে পড়েছে রাশিয়া। তাদের ভ্যাকসিনটির নাম ‘স্পুটনিক ৫’। নামটি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নামে করা হয়েছে।
ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরপুতিন বলেছেন, ‘এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ’। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, তাদের ভ্যাকসিনটির প্রথম ব্যাচ গত শনিবার উৎপাদন করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে পুরো বিশ্ব জুড়ে চলছে তোলপাড়। রাশিয়ার ভ্যাকসিন একদিকে যেমন আশার আলো দেখিয়েছে অন্যদিকে এই ভ্যাকসিনকে ঘিরেই নানা সন্দেহের তীর!
ভ্যাকসিনটি অনুমোদনের ঘোষণার পর উৎপাদনও শুরু করেছে রাশিয়া। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন তথ্য প্রকাশ্যে নেই, প্রশ্ন থাকছে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে। যেসব দেশ মহাকাশে স্পুটনিক, ভস্তক পাঠানোর ইতিহাস জানে; তারা বলছে রাশিয়া এমনই, আনপ্রেডিক্টেবল। তবে বিশ্বাসী-অবিশ্বাস সব মিলিয়ে সকলেরই প্রশ্ন একটা , কী ভাবে পারল রাশিয়া? রহস্যটা ঠিক কোথায়?
এ কথা ঠীক; রাশিয়ার এই দাবির পেছনে রয়েছে তাদের ছ’বছরের পরিশ্রম। ইবোলা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমের ভ্যাকসিন গবেষণাই তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছে এবং সহায়তা করেছে। রাশিয়ার দাবি, মিডল ইস্ট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমের সঙ্গে করোনাভাইরাসের অনেক মিল রয়েছে । তাতে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা তাদের জন্য তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে পুতিন প্রশাসনও জানাচ্ছে ইবোলার সঙ্গে লড়াই তাদের এই পথ আরো মসৃণ হয়ে গিয়েছে। বরাবরের মতোই তাদের দাবি, স্পুটনিক ফাইভ তৈরিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের সঙ্গে অন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন মিশিয়েই এই ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়েছে।
চিন, আমেরিকা-সহ বিশ্বের সব শক্তিশালী দেশগুলিকে হারিয়ে রাশিয়া কিভাবে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করল, কিভাবে এত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন বাজারে আনল? বিশ্বের অনেক দেশই পুতিনের দাবি মানতে নারাজ। রাশিয়ার ভ্যাকসিন এখনও মানব ট্রায়ালের সমস্ত ধাপ পেরোয় নি। কিন্তু এত দ্রুত কিভাবে তৈরি করা গেল এই ভ্যাকসিন? রাশিয়া বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে রুশ বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভ্যাকসিন। সেই সংক্রান্ত তথ্য দিতে এরই মধ্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে রুশ প্রশাসন।
রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ভাইরাসের জিনের সঙ্গে অন্য ভাইরাসের প্রোটিন মিশিয়ে তৈরি হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত করোনার ভ্যাকসিন। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভ্যাকসিন তৈরিতে অ্যাডিনোভাইরাসের ব্যবহার করা হবে। সেইমতো অ্যাডিনো ভাইরাসের জিন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। একইসঙ্গে অন্য ভাইরাসের প্রোটিন নিয়েও গবেষণা চলছিল। সেইমতো নতুন জিন ও প্রোটিনের মিশ্রণে তৈরি করোনার ভ্যাকসিন। রাশিয়ার দাবি, এই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাসেই ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়েছে।
তারপর করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ওই ভ্যাকসিনটিকে কিছুটা পরিবর্তিত করা হয়েছে। এটিই নাকি আসল গল্প, কোনো রাজনীতি নেই। আর ভ্যাকসিন গবেষণার ক্ষেত্রে রাশিয়া সর্বদাই শীর্ষে ছিল।