লন্ডন: বয়স যখন মাত্র আট বছর তখনই ভাগ্য ডোরিয়ানকে তাঁর বাবা-মা এবং পরিবারের কাছ থেকে করেছিল আলাদা। শৈশবে পা দিতে না দিতেই উদ্বাস্তু হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসিত করা হয় ৮ বছরের শিশু ডোরিয়ানকে। সেই থেকেই শুরু জীবন যুদ্ধ। কখনও পরিচারিকার কল্পনাতীত দুর্ব্যবহার, কখনও আবার পেট চালাতে কঠোর পরিশ্রম, জীবন যুদ্ধের এই কঠিন লড়াই করতে করতেই কেটে যায় ডোরিয়ানের শৈশব, কিশোর। এইভাবে কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ৭৫ বছর। এত বছরে নিজের পরিবারের কোনও সদস্যের কথাই আর ঠিকমতো মনে না থাকলেও মাকে কিন্তু কখনও ভুলতে পারেননি ডোরিয়ান। আর তাই বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রায় ৭৫ বছর পরে নিয়তির টানে আবার এক হল মা ছেলে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এমনই এক অবিশ্বাস্য কাহিনী। জানা যাচ্ছে, মার্কিন এক সংবাদপত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদন, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে প্রথমে যুক্তরাজ্য পরে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা ডোরিয়ান রিসের এক অবিশ্বাস্য জীবন কাহিনীর কথা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় মাত্র আট বছর বয়সে ‘শিশু অভিবাসী কর্মসূচির আওতায়’ পরায় ডোরিয়ানকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা হয় এবং পরে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে তার বাবা-মা যুক্তরাজ্যেই থেকে যান। তবে ডোরিয়ান একা নয়, ১৯৪৬ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে এমন হাজার হাজার শিশুকে কর্মসূচির আওতায় এনে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে বাকিদের সঙ্গে কাটে ডোরিয়ানের জীবনের অধিকাংশ সময়। এরপর একটু বড় হয়ে যখন ডোরিয়ান নিজের পায়ে দাঁড়ান এবং কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে পরিস্থিতি তখন থেকেই তিনি তাঁর প্রিয়জনদের সন্ধান করতে শুরু করেন। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতেই সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর ভাগ্নির। আর সেই ভাগ্নির সূত্র ধরেই তিনি দীর্ঘ ৭৫ বছর পর খুঁজে পান তাঁর হারিয়ে যাওয়া মাকে।
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ডোরিয়ান রিসের মতো তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যরাও যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা। এদিকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই স্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনে বাস করতে শুরু করেন ডোরিয়ান। সেই লন্ডনেই দিন কয়েক আগে তাঁর ভাগ্নি অ্যানের সঙ্গে সাক্ষাত হয় ডোরিয়ানের। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল মার্কেটে একটি স্টল রয়েছে তাঁর মায়ের। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই স্টলে পৌঁছান ডোরিয়ান এবং তাঁর স্ত্রী কে। স্টলে পৌঁছে ডোরিয়ানের স্ত্রী যখন তাঁর মাকে ছেলে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তখনই তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন বলে খবর। মায়ের চোখের জল দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি ডোরিয়ান। দীর্ঘ ৭৫ বছরের অপেক্ষা যেন মুহূর্তের মধ্যেই সেদিন বাঁধ ভাঙে।
তবে এখানেই শেষ নয়, ওই একই দিনে ডোরিয়ান তাঁর পিতৃ পরিচয়ও জানতে পেরেছেন বলে খবর। তিনি জানতে পারেন, তাঁর বাবার নাম জর্জ থমাস। ১৮৯২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮১ সালে মারা যান। ডোরিয়ানের জন্মের আগেই তিনি তাঁর স্ত্রী তথা ডোরিয়ানের মায়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যান। এরপর ডোরিয়ান কিংবা তাঁর মা কারর সঙ্গেই আর দেখা হয়নি জর্জের।