ওয়াশিংটন: বিশ্বের ত্রাস এখন করোনা ভাইরাস৷ বিশ্বে ইতিমধ্যে এক লক্ষ মানুষের করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে৷ ১৬ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷ করোনা মানছে না প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর পুঁজিবাদীদের দাপট৷ সোজা সেখানে ঢুকে পড়ে মহামারীর আকার ধারণ করতে শুরু করেছে৷ তা সে চিন হোক বা আমেরিকা৷ ফ্রান্স হোক বা ব্রিটেন৷
বিশ্বের সব থেকে ধনী দুই দেশ চিন ও আমেরিকা নাজেহাল হচ্ছে করোনা ভাইরাস সামলাতে৷ চিনে প্রথমে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে৷ তবে ফের করোনা ঢেউ চিনে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্য দিকে, আমেরিকা করোনা ভাইরাসকে প্রথম দিকে সেভাবে গুরুত্বই দিতে চায়নি৷ অর্থের দম্ভে ভেবেছিল, সব ঠিক করে নেবে৷ যে বিশ্বকে শাসন করে, সে খুব সামান্য একটা ভাইরাসকে শাসন করতে পারবে না৷ অর্থের প্রভাবে, হুমকিতে আমেরিকা বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে ওষুধ নিয়ে চলে আসতে পারে৷ তাদের নাগরিকদের সুরক্ষিত করতে পারে৷ সেই অনুযায়ী ভারতকেও ওষুধ রপ্তানির জন্য হুমকি দিয়েছিল৷ কিন্তু অর্থের দম্ভ ও শক্তির বড়াই করে যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না, তা এখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলো বেশ ভালোই বুঝতে পারছে৷ আমেরিকার পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে৷ মৃতের সংখ্যা যে ইতালিকে ছাড়িয়ে যাবে তা এখন সময়ের অপেক্ষা৷
কিন্তু এরই মধ্যে নতুন বার্তা দিল অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷ পুঁজিবাদের বদল হতে চলেছে৷ তবে বিশ্বের শক্তি কি এবারে হাতবদল করে পুঁজিবাদের বদলে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে আসতে চলেছে৷ বিভিন্ন অর্থনৈতিক পত্রিকায় সে ধরনের চিত্রই যেন উঠে আসছে৷ ফোবর্স পত্রিকা থেকে দ্য নেশন, আল জাজিরা থেকে বিশ্বেরর নানা তাবড় তাবড় পত্রিকায় করোনা পরবর্তী অর্থনীতি নিয়ে ছাপা হচ্ছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন৷ ফোবর্স পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে., করোনা ভাইরাস এসে বুঝিয়েছে, পুঁজিবাদী দেশগুলোর আর্থিক ও সামাজিক পরিকাঠামো কতটা পঙ্গু৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পুঁজিবাদী দেশগুলো কখনই মানুষের কথা ভাবে না৷ কম সময়ে অনেক বেশি মুনাফাই তাদের মূল উদ্দেশ্য৷ যার হাতে সম্পদ রয়েছে, সে সম্পদ বাড়াচ্ছে৷ আর যার হাতে সম্পদ নেই, সে আরও গরীব হচ্ছে৷ কিন্তু এই ভাইরাস তো গরিব বড়লোক দেখে আক্রমণ করছে না৷ এখন ধনী সম্প্রদায় বুঝেছে, সমাজে ধনীদের ভূমিকাও যথেষ্ট৷ আর সরকার শুধু পুঁজির পিছনে ছুটছে৷ গবেষণা, স্বাস্থ্যে কোনও লাভ নেই বলে সরকার সেখানে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কমিয়েছে৷ এখন তার ফল ভুগতে হচ্ছে৷
নগরোন্নায়নের লোভে, বেশি ব্যবসার লোভে পরিবেশের কথা ভাবেনি মানুষ৷ এখন সেই পরিবেশই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সাধারণ মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে, অর্থনৈতির মন্দা কাটতে পারে৷ কিন্তু জীবন ফিরে আসতে পারে না৷ বেঁচে থাকতে গেলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দরকার৷ পরিবেশকে বাঁচানো দরকার৷ ধনী, গরিব সবার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা থাকা দরকার৷ এখানেই আসছে সমাজ তন্ত্রের ভাবনা৷
চিন থেকে এখন সরে আসছে করোনা৷ আমেরিকা থেকে ইউরোপের প্রতিটি দেশ বুঝতে পারছে, চিন বর্তমানে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে৷ চিন সমস্ত মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে করোনা মোকাবিলায় নেমেছিল৷ সরকারের নিয়ন্ত্রণেই করোনার কবল থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা৷ এটা হয়েছে, কারণ চিনের প্রতিটা নাগরিক চিকিৎসা পেয়েছে৷ সেখানে ধনী গরিব দেখা হয়নি৷ চিনের বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ হয় গবেষণায় ও সামাজিক উন্নয়নে৷ তার ফল পেয়েছে তারা৷ ফলে মাত্র ১০ দিনে চিনে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বিশালাকার হাসপাতাল৷
অন্য দিকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে৷ আম্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নির্ধারণে শেষ কথা রাশি্য়া৷ অদ্ভুত নিয়মে রাশিয়াতেও করোনা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি৷ অন্যদিকে ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশগুলো করোনা মোকাবিলা করতে নাজেহাল৷ এরপর একের পর এক সংস্থা টাল সামলাতে না পেরে বিক্রি হয়ে যাবে৷ সেই সময় ওই সব সংস্থা কেনার মতো সামর্থ্য থাকবে একমাত্র চিনের৷ কিছু ক্ষেত্রে থাকবে রাশিয়ায়৷ এখন চিনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব সরাসরি বাড়তে চলেছে৷
সব দেখেশুনেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারছেন তাঁর কিছুই করার নেই৷এখন তাঁকে ভারত থেকে ওষুধ চাইতে হচ্ছে হাত পেতে৷ হুমকির সুরে বলতেও হচ্ছে, ওষুধ না পেলে তাঁকে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে দেখে নেবেন, সেটাও বোধহয় তিনিও জানেন না৷ করোনায় বর্তমান পরিস্থিতি যা মানুষ এখন বিলাসিতায় বিশ্বাস করছে, মানুষ এখন গাড়ি বা ভালো বাড়ির থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে বেঁচে থাকতে৷ বেঁচে থাকার প্রাইমারি জিনিসগুলো পেতে৷ পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, কোনও কিছুতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা প্রয়োজন৷ কতটা প্রয়োজন সঞ্চয়ের৷ আর কতটা নিষ্প্রোয়জন বিলাস বহুল জীবন৷ করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, পুঁজিবাদ নয়, সমাজতন্ত্রই একমাত্র মানুষকে উদ্ধার করতে পারে৷