ওয়াশিংটন: করোনা সংক্রমন রুখতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে পর্যাপ্ত টেস্টের কথাই বলে আসছেন গবেষক ও চিকিৎসকেরা। আর এই টেস্ট নিয়েই মূলত সমস্যা তৈরী হচ্ছে সব দেশই। একসঙ্গে বহু টেস্টের ক্ষেত্রে কিটের অভাব ও ত্রুটি যেমন সমস্যা বাড়াচ্ছে তেমনই নির্দিষ্ট উপসর্গ বুঝতেও বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে। বিশ্বের সব দেশেই তাই করোনা সনাক্তকরণের পদ্ধতি সহজসাধ্য করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল একধরণের ওয়্যারলেস সেন্সর। যা তৈরী হয়েছে হার্ড-হিট শিকাগো-র নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং শিরলে রায়ান অ্যাবিলিটিএল-এর যৌথ উদ্যোগে। অনেকটা ব্যান্ড-এইডের মতো দেখতে এটি একটি নমনীয় ওয়্যারলেস সেন্সর যা গলা এবং বুকের সংযোগস্থলে লাগিয়ে দিলে করোনভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ এবং সংক্রমণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
গলার শেষভাগ যেখানে বুকের অস্থির সঙ্গে যুক্ত(সুপ্রেসেন্টাল) সেই খাঁজের নীচের দিকে বায়ুপ্রবাহ ত্বকের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে এবং যেখানে ট্র্যাচোস্টোমিজ অর্থাৎ বিকল্প শ্বাসনালী প্রতিস্থাপন করা হয়। ঠিক সেই খাঁজে এই প্যাচটি লাগাতে হবে। অবশ্য কোনো সার্জারি ছাড়াই বিশেষ আঠার সাহায্যে এটি ত্বকের সঙ্গে আটকানো যাবে। এই প্যাচটির সঙ্গে সেই সেন্সরগুলির খুব মিল আছে যার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের কথা বলার ক্ষমতা এবং ঢোক গেলার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা যায়। সেই পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই এই সেন্সরটির চিন্তা ভাবনা করা হয় যা কোভিড-১৯ এর কারণে উদ্ভুত মূল উপসর্গ, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে পারবে।
শুধু তাই নয় প্যাচটির সাহায্যে হার্ট বিটের হার এবং শরীরের তাপমাত্রাও মাপা যাবে। এর আরও একটি বিশেষত্ব হল এর মাধ্যমে সরাসরি তথ্য পৌঁছে যাবে সরকারের কাছে। দিনে একবার এটা খুলে নিয়ে ওয়্যারলেস চার্জারে রাখলে প্যাচটিতে সঞ্চিত তথ্য নির্দিষ্ট আইপ্যাডে উঠে যাবে এবং সেখান থেকে ডেটা এইচআইপিএএ (হেলথ ইন্সুরেন্স পোর্টেবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট)- এর অভিযোগ সংক্রান্ত ক্লাউডে আপলোড করা হয় যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত এআই অ্যালগরিদম এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত অসঙ্গতিগুলি পরীক্ষা করে দেখা হয়। পাওয়ারের জন্য এক্সটার্নাল পোর্ট না থাকায় এটি জীবাণুমুক্ত করাও সহজ হয়।
এই সেন্সরটির সনাক্তকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বায়ো-ইন্টিগ্রেটেড ইলেক্ট্রনিক্স সম্পর্কিত নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর জন রজার্স বলেছেন,”আমরা কোনও মাইক্রোফোন ব্যবহার করি না,” “আশেপাশের শব্দ এবং চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখতে হলে মাইক্রোফোন ব্যবহারে সমস্যা রয়েছে। আমরা ত্বকের উপরিভাগের গতিবেগ পরিমাপ করতে একটি হাই-ব্যান্ডউইডথ এবং ট্রাই-এক্সিস অ্যাকসিলোমিটার ব্যবহার করি” যা শ্বাস-প্রশ্বাস এবং কাশি সম্পর্কিত বিশদ তথ্য জানতে ব্যবহৃত ডিজিটাল স্টেথোস্কোপে মতো কাজ করে। সুতরাং বলাই যায় এই সেন্সর সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে করোনা সংক্রমণ সনাক্তকরণ অনেকটাই সহজ হবে।
সূত্র- সি/নেট