ওয়াশিংটন: বাঘকে দেখে আবেগে গদগদ অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকারের পরিণত হওয়া নতুন কোনও বিষয় নয়, তবে বাঘমশাই যে এতটা বেরসিক কে জানত, তাইতো নামী মোবাইলে সু্ন্দরীর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ পেয়েও তা জিনগত টানে হারিয়ে ফেলে কখনও? পোজ দেওয়া যেমন তেমন মহিলার চাঁপারকলি শোভিত আঙুলগুলিকে রীতিমতো উপেক্ষা করেই হাতের তালু ফালাফালা করে দিল বাঘমামা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন মুলুকের অ্যারিজোনার লিচফিল্ড পার্ক চিরিয়াখানায়।
বলাবাহুল্য, এই হামলে পড়া বাঘটি কিন্তু বাঙালির সাধের রয়্যাল বেঙ্গল বা চিতা নয়। এহল শিকারের শিরোমণি জাগুয়ার। বলাবাহুল্য, বাঘেদের প্রজাতির মধ্যে সবথেকে হিংস্র হল এই কালো রঙের বাঘ জাগুয়ার। কোনও পশুই জাগুয়ারকে হুট বলতে চটাতে চায় না তার হিংস্রতার কারণেই। তবে সুন্দরীরা তো সবেতেই প্রেম খুঁজে পান তা আর কী করা যাবে, কলসীর কানা তো খেতেই হবে, হোক না তা নখের আঁচর তাই বা কম কীসে।
জানা গিয়েছে, লিচফিল্ডের চিড়িয়াখানাটি ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক। ছুটির দিন বাঘ দেখতে এখানে ভিড় উপচে পড়ে। আরে জাগুয়ারটির নৃশংসতাও সর্বজনবিদিত, তাই পা্র্ক কর্তৃপক্ষ তথা মালিক মিকি ওলসন দুর্ঘটনা এড়াতে জাগুয়ারের খাঁচার বাইরেও একটা ঘেরাটোপ করে দিয়েছিলেন। একটাই উদ্দেশ্য, সেই ঘেরাটোপের বাইরে থেকেই জাগুয়ার দর্শন করুক চিড়িয়াখানায় ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীরা। কেননা গতবছরও এমনই এক হামলার ঘটনা ঘটায় এই সতর্কতা জারি হয়। সারা বছর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে কিছুই না ঘটায় এই রবিবার নিরাপত্তারক্ষীদের খুব একটা কড়াকড়ি ছিল না। এদিন চিড়িয়াখানায় থাকা এক দর্শনার্থী অ্যাডাম উইলকারস ন জানিয়েছেন, মাকে নিয়ে তিনিও কালোবাঘ দর্শনে আসেন। দেখে সব ভিড় ওই ঘেরাটোপের বাইরেই। তারই মধ্যে থেকে এক অত্যুৎসাহী মহিলা সবাইকে ঠেলে ঘেরাটোপে ঢুকে পড়েছেন। বাকিদের নিষেধ শোনার আগেই দামী স্মার্টফোনটি নিয়ে জাগুয়ারের ঘাড়ের কাছে চলে গিয়েছেন তিনি।
জাগুয়ার ততক্ষণে ক্লান্তি ঝেরে ফেলে খাঁচার কিনারায় রোদ পোহাতে এসেছিল। এমন সময় তার খেয়াল হয় এক তন্বী তাকে হাঁ করে শুধু দেখছেই নয়, তার মুখের সামনে মোবাইল ফোন বাড়িয়ে একখানা যুতসই সেলফি তোলার চেষ্টা করছেন। এই দেখেই চরম বিরক্তিতে হাতটি সরানোর চেষ্টা করে সে, নখওয়ালা থাবা গিয়ে পড়ের তরুণীর সোয়েটারে, নির্লিপ্ত কালোবাঘের এমন সপ্রতিভ আচরণে ততক্ষণে প্রমাদ গুনছেন ওই মহিলা হাত ছাড়াতে রীতিমতো আর্তনাদ শুরু করেছেন, বাঘও ছাড়ার পাত্র নয়। অন্যান্য দর্শকদের মধ্যে ছিলে অ্যাডামের মা, তিনি হাতে্ থাকা জলের বোতলটি বাঘের মুখে চেপে ধরতেই তাতে দাঁত বসিয়ে দেয় জাগুয়ার, মুহূর্তে তার থাবা আলগা হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই সুযোগেই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত হাতটি খাঁচা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনেন।
এরপর তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, জাগুয়ারের হাত থেকে এযাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন তিনি। নির্মম পরিণতি দেখা থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি দর্শকরাও। আর ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে নিশ্চিন্ত চিড়িয়াখানার মালিক মিকি ওলসনও।