যুদ্ধে ইতি! ইউক্রেন ভারতের মাঝে কোন সেতু গড়লেন মোদী?

দিল্লি: ইউক্রেন সফরে গিয়ে যুদ্ধে ইতি টানলেন মোদী? কামানের গর্জন বারুদের গন্ধের মাঝে,কোন মন্ত্রে সেতু গড়বে ভারত?চারপথে ভারত জুড়ে গেল ইউক্রেনের সাথে।এবার এতো বড় ডিল…

দিল্লি: ইউক্রেন সফরে গিয়ে যুদ্ধে ইতি টানলেন মোদী? কামানের গর্জন বারুদের গন্ধের মাঝে,কোন মন্ত্রে সেতু গড়বে ভারত?চারপথে ভারত জুড়ে গেল ইউক্রেনের সাথে।এবার এতো বড় ডিল পুতিনের নাকের ডগায়,কোন চোখে দেখছে রাশিয়া?

ইউক্রেনে পৌঁছনোর আগেই আসল মেসেজটা দিয়ে দিয়েছিলেন মোদী। “ভারত শান্তির সেতু হতে চায়, কোনও পক্ষ নিতে নয়।”অনেক বড় কথা। তাহলে কী যুদ্ধ বন্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ করতে ডিরেক্ট ইউক্রেনে নরেন্দ্র মোদী? এতোগুলো বছর কেটে গেছে। মাঝে অনেকটা সময়। ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনে গেলেন। বিষয়টাকে রাশিয়া কীভাবে দেখছে, সেটা ভাবার বিষয়। কারণ এই ইউক্রেনের সঙ্গেই রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে আড়াই বছর ধরে। আবার এই রাশিয়ার সঙ্গেই ভারতের ভাব গলায় গলায়। সেক্ষেত্রে ভারত থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই মূহুর্তে রাশিয়া বা ইউক্রেন সফর, অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো পক্ষ স্পেশাল সাপোর্ট পাচ্ছে কিনা ভারতের থেকে, এটাই তো বুঝে নেওয়ার একটা বড় মাধ্যম হতে পারে।‌ কিন্তু ভারত মোটেও বিষয়টাকে এতো জটিল করে দেখতে নারাজ। ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ, শান্তি চায়, সে কথা এক নয় একাধিক বার বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর ঠিক সেই কারণেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে এতোটা সময় ধরে ভারত নিজেকে সরিয়ে রেখেছে। ডিসটেন্স মেইনটেইন করেছে। কারণ, ভারত কোনোভাবেই আর যাই হোক এই যুদ্ধের অংশ হয়ে উঠতে চায়নি। এমনকি সম্প্রতি সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারত এটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতা নয়, বার্তা সমন্বয় এর কাজ করতে পারে নয়াদিল্লি। হ্যাঁ ব্যালেন্স করতে জানে ভারত। আর ঠিক সেই কারণেই গত ৮ জুলাই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন মোদী। আর, ঠিক তারপরেই কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যের বার্তা দিয়ে এ বার রাশিয়ার শত্রু দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সমালোচকেরা অবশ্য বলছেন, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়াকে সন্তুষ্ট করতেই তাঁর এই সফর। তাতে যদিও কান দিচ্ছেনা ভারত।

বরং কামানের গর্জন আর বারুদের গন্ধে ভরা ইউক্রেনে গিয়ে মোদী গড়লেন ইতিহাস। ইউক্রেনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সঙ্গে সারলেন বিশেষ বৈঠক। দিয়েছেন শান্তিপূর্ণভাবে ইউক্রেন সমস্যা মেটানোর বার্তা। বলেছেন, বন্ধু এবং সঙ্গী হিসাবে ভারত চায় পূর্ব ইউরোপে শান্তি ফিরুক। শুধু করমর্দন কিম্বা আলিঙ্গনই নয়। এদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাঁধে কার্যত বন্ধুত্বপূর্ণ হাত রাখলেন মোদি। যে ছবি দেখে কূটনৈতিকরা মনে করছেন, বিদেশনীতির আঙিনায় এটা একটি প্রতীকী ঘটনা। ইউক্রেন ও ভারতকে ঘিরে উৎসুক। মোদির সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ইউক্রেনও। প্রেসিডেন্টের অন্যতম উপদেষ্টা মিখাইলো বলেছেন, “মোদির সফর আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের বোঝাতে হবে যে, যুদ্ধের সঠিক পরিণতি কী হওয়া উচিত।” যে দেশটা ভারতকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছে তাদের সাথেই ভারত সেরে ফেললো চার চারটে চুক্তি। কৃষি, খাদ্যশিল্প, মেডিসিন, সংস্কৃতি মোট ৪ ক্ষেত্রে ডিল করলো দুই দেশ। বোঝাই যাচ্ছে, ইউক্রেন ভারত, দুটো দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে মোদীর এই সফরে।

যদিও জেলেনেস্কির অন্যতম উপদেষ্টা মিখাইলোর মতে, যেহেতু নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সুসম্পর্ক আছে তাই মোদির এই সফরের প্রভাব পড়বে রাশিয়ার উপর। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ভারতের ব্যালেন্স নীতি তাক লাগানোর মতো। তাই মোদীর কিয়েভ সফর, রাশিয়া আর ভারতের সম্পর্কে চির ধরাবেনা। সেক্ষেত্রে মোদীর এই সফর ঘিরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে কী প্রভাব পড়ে, যুদ্ধের তেজ কতটা কমে, যুদ্ধের সময়ই বা কতটা ছোট হয়ে আসে সেদিকেই তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল।