বেজিং: ২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম দেখা মিলেছিল করোনা ভাইরাসের। তার কয়েকমাস পর ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে চীনে ঘোষিত হয়েছিল বিশ্বের প্রথম করোনা লকডাউন। উহানের সেই লকডাউনের ঘোষণার পর কেটে গেছে একটা গোটা বছর। এতদিনে ১.১ কোটি জনসংখ্যার সেই চীনা শহরে জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। কিন্তু বাকি দুনিয়া এখনও উপড়ে ফেলতে পারে নি করোনা কাঁটা।
বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছে করোনা। শুধু তাই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকেই এলোমেলো করে দিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে বেশ কিছু দেশে, কিন্তু পৃথিবীর কোণায় কোণায় তা ছড়িয়ে দেওয়া, প্রতিটি মানুষের মাঝে করোনা টিকার বন্টন একাধিক জটিলতার সৃষ্টি করেছে। উহানের প্রথম লকডাউনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত করোনা অতিমারীর বিশ্বজোড়া রূপরেখাটি কেমন? আসুন একবার ফিরে দেখা যাক সেই চিত্র।
এখনও পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৯কোটি ৮০ লক্ষের বেশি করোনা সংক্রমণের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণায় ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। বহু দেশই বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, এমনকি কিছু কিছু দেশ তৃতীয় ঢেউয়ের মুখোমুখিও হচ্ছে। ইউরোপের বেশ কিছু এলাকার রাষ্ট্রপ্রধানরা নতুন করে জনগণের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে বাধ্য হয়েছেন।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের করোনা সংক্রমণের ছবিটাও খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি সংক্রমণের ঘটনার পাশাপাশি সেখানেও দেখা দিয়েছে নতুন ঢেউ। চলতি মাসের শুরুতেই ভারতের করোনা সংক্রমণের সংখ্যা পেরিয়েছে ১ কোটির গন্ডি। এমনকি ব্রিটেনে দেখা দিয়েছে ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিৎসক মহলের। নতুন করে লকডাউন ঘোষণায় বাধ্য হয়েছে বরিস জনসন পরিচালিত ব্রিটিশ সরকার। নেদারল্যান্ডসের করোনা পরিস্থিতি সম্প্রতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ফের কার্ফ্যু জারি হয়েছে নেদারল্যান্ডসে। বিভিন্ন দেশেই সংক্রমণ দমনে গৃহীত হয়েছে একাধিক উদ্যোগ।
বিশ্বজোড়া করোনা অতিমারীর সবচেয়ে করুণ পরিণতি হয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের পর সম্প্রতি মার্কিন মুলুকের নতুন প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ করেছেন জো বাইডেন। ইতিমধ্যে করোনায় ৪ লক্ষ আমেরিকাবাসীর মৃত্যু দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাঁকেও। গত সপ্তাহে ভাইরাসে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে প্রায় ১৬%। অতিমারীর প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনীতিও। তবে বিশ্বজোড়া এই অতিমারীর মাঝে ভ্যাকসিনের আশ্বাস নিয়ে এসেছে কিছুটা স্বস্তি। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের জয় হবেই, আশাবাদী মানুষ।