কলম্বো: মাসখানেক আগেই শেষ হয়েছে ডিজেলের যাবতীয় সঞ্জয়। জ্বালানি তেল বলতে অবশিষ্ট ছিল খালি পেট্রোল। ইতিমধ্যেই ডিজেলের অভাবে সরকারি বাস পরিষেবা থেকে একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিষেবা বন্ধ হয়েছে সমস্ত কিছুই। শেষ ভরসা ছিল এই পেট্রোল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে সেইটুকু শেষ আশাও যেন কেড়ে নিলেন দেশবাসীর কাছে থেকে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের ভাঁড়ারে যেটুকু পেট্রোল বাকি রয়েছে তাতে খুব বেশি হলে মাত্র একদিনের জ্বালানির যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। তারপর কি হবে? জ্বালানির অভাবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে দেশের মানুষ, তা জানা নেই কারোরই। এর সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, আগামী কয়েক মাস আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে দেশকে। এখনও অনেক কঠিন লড়াই লড়া বাকি।
উল্লেখ্য, চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে থেকে যাওয়া প্রায় দেউলিয়া দেশ শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত সপ্তাহেই শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমসিংহে। তবে এক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রধানমন্ত্রীর কিছুই আর করার নেই, একথা সকলেরই জানা। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিলের নাম সামনে আসতেই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের দাবি করেছিলেন সব জেনে কাঁটার মুকুট মাথায় পড়ছেন রনিল বিক্রমসিংহে। এমতাবস্থায় শপথ নেওয়ার পর পরই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের দাম মেটানোর জন্য অবিলম্বে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে সেই উত্তর কারোর জানা নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের সামান্য কিছু সম্পদ অবশিষ্ট থাকলে সেক্ষেত্রে বুদ্ধি খাটিয়ে দেশকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা যায় কিন্তু এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার কাছে সেই সুযোগও নেই। ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রী একা কি করবেন? তাঁদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে যদি আন্তর্জাতিক মহল এবং ব্যক্তিগত স্তরে দেশের বিত্তশালীরা দেশের পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব।
অন্যদিকে জ্বালানি প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘ভারতের সহায়তায় শীঘ্রই দেশে পেট্রোল ও ডিজেলের দুটি করে মোট চারটি শিপমেন্ট এসে পৌঁছাবে। তাতে আগামী কয়েকটা দিন জ্বালানির সমস্যা কিছুটা হলেও মিটতে পারে। তবে তারপরে কি হবে সে ব্যাপারে কারণ কিছু জানা নেই। অন্যদিকে চিকিৎসা পরিষেবার বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে এদিন মুখ খুলেছেন বিক্রমসিংহে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে অন্তত ১৪টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিশেষে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর এই লড়াই প্রসঙ্গে দেশবাসীকে বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রবিবার জানান, ‘আগামী কয়েক মাস আমাদের অত্যন্ত দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই সময়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে এবং আমাদেরকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’
উল্লেখ্য আর্থিক অনটনের কারণে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ, আন্দোলনের কাছে শেষমেশ হার মেনে গত সপ্তাহের সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপরেও দেশজুড়ে চলে চরম বিক্ষোভ, আন্দোলন। দেশজুড়ে চলা এই অশান্তিতে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ১০ জনের। দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি হয় জরুরি অবস্থা এবং রাস্তায় নামানো হয় সেনা। এখন চরম পরিস্থিতিতেই শ্রীলঙ্কার হাল শোধরাতে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেন রনিল বিক্রমসিংহে। দেশবাসীর কাছে এখন তিনিই একমাত্র ভরসা। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে কিভাবে তিনি দেশের মানুষকে উদ্ধার করেন এবং শ্রীলঙ্কার হাল ফেরান এখন সেটাই দেখার।