আজ বিকেল: মহাকাশ গবেষণায় বিশ্বের এক নম্বরে থাকার দৌড়ে বার বার আমেরিকার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ করে গিয়েছে সোভিয়েত রাশিয়া। একটা সময় ঠিক হয় মহাকাশের পরিস্থিতি বোঝা জরুরি। তাই স্পুটনিক টু-তে চড়ে মহাকাশে যাবে কুকুর লাইকা। এই লাইকার কথা একটু বলে নেওয়া যাক, সাদা বাংলায় যাকে নেড়ি কুকুর বলে লাইকা তাই ছিল। তাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে মহাকাশবিদরা নামকরণ করেন লাইকা। আমেরিকা জানতে পেরে বলে লাইকা আসলে সাইবেরিয়ান হাস্ক জাতের কুকুর। যদিও রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের দাবি লাইকা মোটেও তা নয়। কেননা দামী কুকুরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে না, আর রাস্তার কুকুর হওয়ায় যেকোনও পরিস্থিতিতে ভালভাবে বাঁচতে শিখে গিয়েছে লাইকা। তাই তাকেই পছন্দের তালিকার একদম উপরে রাখা হয়। ১৯৫৭-র ৩ নভেম্বর লাইকাকে নিয়ে স্পুটনিক টু মহাকাশের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। পরে জানা যায় কয়েকদিন পর লাইকার মৃত্যু হয়েছিল।তবে আরো পরে অর্থাৎ ১৯৯৩ সাল নাগাদ প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে আসে, তাতে জানা যায় লাইকা মহাকাশ যানে চড়ার দিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মহাকাশের তাপমাত্রার সঙ্গে যুঝে উঠতে পারেনি এই অবোধ প্রাণীটি অকালেই প্রাণ দেয়। তাপের জেরে গলে গিয়েছিল তার শরীর। বিজ্ঞানীরা জানতেন গিনিপিগ করে পাঠনো লাইকা আর কোনওদিন ফিরে আসবে না। তাই রাস্তা থেকে তুলে আনার পর নিরন্তর প্রশিক্ষণ চলত। মহাকাশ অভিযানের দিনদুয়েক আগে মায়ায় পড়ে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান মহাকাশ গবেষণা সংস্থার মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার ইয়াযদভস্কি তাঁর ছেলে তথা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ভিক্টর ইয়াযদভস্কি এর স্মৃতিচারণ করেছেন। তাঁর বয়স তখন নয়, লাইকাকে বাড়িতে নিয়ে এলেন বাবা মস্কোতেই তাঁদের বাড়িষ বোনের সঙ্গে লাইকাকে নিয়ে খেলাও করেছিলেন ভিক্টর।
লাইকা মহাকাশে কি খাবে তারজন্য মাংসের পেস্ট তৈরি হয়, তৃষ্ণা মেটাতে তৈরি হয় জেল। বলাবাহুল্য, ১৯৫৭ সাল ছিল রুশ বিপ্লবের ৪০তম বর্ষ। আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মহাকাশে জীবন্ত প্রাণী পাঠানোর বন্দোবস্ত হয়। আর সেজন্যই লাইকাকে নির্বাচন করা। কিন্তু তড়িঘড়ি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে গিয়ে মহাকাশযানের অন্দরের তাপমাত্রা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করতে পারেননি রুশ বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই মৃত্যু হয় লাইকার। মাত্র চারবার প্রদক্ষিণের পরেই লাইকার আর কোনও সাড়াশব্দ পাননি বিজ্ঞানীরা। তার শরীরে থকা ট্রান্সমিটার কিছুই জানান দেয়নি। গরমে সিদ্ধ হয়ে লাইকার প্রাণ যায়। যদিও এমন অমানবিক ঘটনাকে প্রকাশ্যে আনতে বেশ গড়িমসি করেছিল রুশ মহাকাশ সংস্থা।