হাসিনা ইস্যু! ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে ‘ব্যাড এফেক্ট’?

দিল্লি: ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে সেই ব্যাড এফেক্ট পড়েই গেল?কারণ এক এবং একমাত্র শেখ হাসিনা?হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া, ভারত থেকে হাসিনার বিবৃতি,ইউনুস যা বললেন, তাতে কিসের ইঙ্গিত…

দিল্লি: ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে সেই ব্যাড এফেক্ট পড়েই গেল?কারণ এক এবং একমাত্র শেখ হাসিনা?হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া, ভারত থেকে হাসিনার বিবৃতি,ইউনুস যা বললেন, তাতে কিসের ইঙ্গিত লুকিয়ে?এটাও পরিষ্কার হয়ে গেল প্রত্যর্পণ চুক্তিতে হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ?কোন স্ট্র্যাটেজি অ্যাপ্লাই করে পুরোটা হ্যান্ডেল করবে ভারত?

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কে যে বাংলাদেশ এত গুরুত্ব দেয় সেই বাংলাদেশেরই সুর বদলাচ্ছে। আশঙ্কাই সত্যি হলো। শেখ হাসিনা ইস্যুতেই কি তাহলে দূরত্ব বাড়ছে ভারত বাংলাদেশের? একবার এই সম্পর্ক ঠান্ডা ঘরে চলে গেলে, আফ্টার এফেক্টসে যা যা ঘটবে সেটা কিন্তু খুব একটা ভালো হবে না, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। অলরেডি বিভিন্ন মহলে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন বিষয়ে আলোচনা করতে হচ্ছেই বা কেন?

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন ভারতে। বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চেয়েও না পেয়ে অবশেষে ভারতেই থেকে যান। এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু তারপর, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বিবৃতি। না এই বিষয়টাকে মানতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনিতেই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ মোঃ ইউনুস হাসিনা বিদ্বেষ নিয়ে মত্ত। শেখ হাসিনাকে সব দিক থেকে কোণঠাসা করাই তার একমাত্র টার্গেট। তাই একের পর এক হাসিনা বিরোধী, আওয়ামী লীগ বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে। যদিও এসবের মাঝে ইউনুসের নাকের ডগায় বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিণত করার ছক কষা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বাড়ছে জামাতে ইসলামী হেফাজতে ইসলামের মত ইসলামী দলগুলোর দাপট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার ডাক দিয়েছিল সেটাকেও বাস্তবে পরিণত করার আপাতত কোনো প্ল্যান চোখে পড়ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের মাথায় সদ্যবশা ইউনুসের, সেদিকে নজর কোথায়? বরং তিনি অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ভারত থেকে হাসিনাকি বিবৃতি দিচ্ছেন সেটা নিয়ে। এমনকি সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরেও কি ধরনের নির্যাতন বা অত্যাচার চলছে বাংলাদেশের বুকে, তা রুখতে ইউনূসকে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ করতে এখনও পর্যন্ত দেখা গেছে কি? মোদ্দা কথা বাংলাদেশ যখন এখনো প্রপারলি শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে, তখনো ভারতে বসে হাসিনা কি করছেন তা নিয়ে মাথা ব্যথা ইউনুসের।

বললেন, তিনি তাঁর মতো নিজের দুনিয়ায় থাকতেন ৷ বাংলাদেশের মানুষও শেখ হাসিনার কথা ভুলে যেত৷ কিন্তু তা হচ্ছে না৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সু’সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে চুপ থাকার পরামর্শ বাংলাদেশের বর্তমান মুখ্য উপদেষ্টা ইউনুসের৷ একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন প্রত্যর্পণ চুক্তিতে যে কোন দিন যেকোনো সময় হাসিনাকে ফেরত যাওয়া হতে পারে বাংলাদেশের তরফে। তাহলে কী ভয় ধরাতেই এমন কথা বললেন মোঃ ইউনুস?
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মহম্মদ ইউনুস বলেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন ৷ এটা বন্ধুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত নয় ৷ বাংলাদেশ সরকার যতদিন না তাঁকে ফেরত চাইছে, ততদিন যদি ভারত হাসিনাকে রাখতে চায় তাহলে তাঁকে চুপ করে থাকতে হবে ৷” ঠেস দিতে ছাড়েননি ভারতকেও। বলেছেন, নয়াদিল্লিকেও এই আখ্যানের বাইরে বেরতে হবে যে, আওয়ামি লিগ ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলি চরম মনোভাপন্ন ৷ আর শেখ হাসিনা না-থাকলে দেশটা আফগানিস্তানে পরিণত হবে৷

আসলে, হাসিনাহীন বাংলাদেশে অস্থিরতা তুঙ্গে। চলছে চরম অরাজকতা। সেখানে এখনও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ। এও অভিযোগ, বাংলাদেশে যুবকদের ভারত এবং হিন্দুবিরোধী করার চেষ্টা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি আরেকটা আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে তসলিমা নাসরিন সহ অনেকেরই আশঙ্কা। এমনকি আমেরিকাও আফগানিস্তানের সঙ্গেই রেড লিস্টে রেখেছে বাংলাদেশকে। আর এইসব দেখেশুনেই ভারতকে ঠেস দিয়ে ইউনুস বোঝালেন বাংলাদেশ আর যাই হোক আফগানিস্তান হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল এতে ভারতের আস্থা বাড়বে কী বাংলাদেশের উপর? হাসিনার দিকেও যেভাবে আঙ্গুল তুলছে বাংলাদেশ, সেটাকেই বা ভারত কোন চোখে দেখবে?

কারণ, ইউনূস বলছেন, ভারতের মাটি থেকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার এমন বিবৃতি নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। সে কারণেই আমরা হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ চাইছি। কিন্তু প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে ভারত কি আদৌ হাতছাড়া করবে শেখ হাসিনাকে? নাকি প্ল্যান বি এর পথে হাঁটবে নয়া দিলি? সেক্ষেত্রে ইউনুসের কথাই সত্যি হয়ে যাবে না তো? ভারত বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকবে না তো?