করোনা নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরলেন আশাবাদী বিল গেটস

করোনা নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরলেন আশাবাদী বিল গেটস

ওয়াশিংটন: করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। এতদিনে বিশ্ববাসী এটা মেনে নিতে শুরু করেছে যে কার্যকরী ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগ ছাড়া এই অতিমারীর হাত থেকে নিস্তার নেই। আর এই সত্যতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কিছু গবেষক বলেই দিয়েছেন যে আপাতত এই অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার অভ্যাস করে নিতে হবে মানুষকে। কারণ নোভেল করোনাকে জব্দ করার এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট কোনো দিশা দেখাতে পারেনি বিশ্বের কোনো গবেষণাগার। এর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে নিজের ধারণা এবং চিন্তাভাবনা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন মাইক্রোসফ্টের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।

আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি এস ফাউসির সঙ্গে সহমত পোষণ করে একটি ব্লগে তিনি লিখেছেন, করোনা ভ্যাকসিন তৈরী  করতে ঐতিহাসিকভাবে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে বিশ্ব। এরজন্য ১৮ মাস সময়টা আমাদের কাছে  দীর্ঘ সময় বলে মনে হলেও যদি এই সময়ের মধ্যে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হয় তবে এটাই হবে হবে বিশ্বের ইতিহাসে সব দ্রুততম ভ্যাকসিন আবিস্কারের নজির।

যদিও গেটস আশা প্রকাশ করেছেন যে, গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১১৫ ধরনের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা মূলক সফলতার খবর তার কাছে আছে। এরমধ্য ৮ থেকে ১০ টি সম্ভাবনাময় প্রতিযোগীর কেউ একজন নিশ্চই আগামী ৯ মাসে  এই কাজে সফল হবে। তবে এর পাশাপাশি একথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে এপর্যন্ত বিভিন্ন মারণ রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করতে সাধারণভাবে কমপক্ষে ৫ বছর সময় লেগেছে।

গেটস বলেছেন একটি রোগ নির্ণয়ের পর দীর্ঘ সময় ধরে তার পরীক্ষামূলক পদ্ধতিটি বেশ সময় সাপেক্ষ। বিভিন্ন পশুর দেহে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হওয়ার পরেও মানুষের দেহে প্রথমে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হয়। তার পরেও অসফলতার দেখা গেছে। সুতরাং আবার প্রথম থেকে শুরু। এখানে গেটস বলছেন, ভ্যাকসিন তৈরীর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দুর্বলতা কোনো বিষয় নয়। কারণ সব দেশের সরকার যেকোনোপ্রকারে এই খরচ বহন করতে রাজী। সুতরাং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই একইসঙ্গে একাধিক ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা সময়ও বাঁচাতে পারবে। নতুন আরএনএ এবং ডিএনএ ভ্যাকসিন দুটি নিয়ে তিনি দারুন উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন প্রাথমিকভাবে একটি ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ কার্যকর হলেও তার এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সহায়ক হবে।

নিজের ব্লগ পোস্টে বিল গেটস উল্লেখ করেছেন, যদি এই মুহূর্তে কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায় একশো শতাংশ নিখুঁত না হলেও তার ব্যবহার করতে হবে ।বিশেষত বয়স্কদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম কিনা সেটাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এর সমবন্টনের বিষয়ে। তাঁর মতে ৭০০ কোটি ডোজ তৈরি করতে কয়েক মাস, এমনকী কয়েক বছরও সময় লাগতে পারে। ফলে বাস্তবে প্রত্যেকে একই সময়ে ভ্যাকসিনটি দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে প্রথম ব্যাচ তৈরীর সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করা উচিত।

নিজের ব্লগে গেটস বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের  নির্ধারিত নিয়মবিধি মেনে চলেন। তিনি বলেছেন, এই মহামারী থেকে সরক্ষিত থাকতে পরস্পরকে নিরাপদে রাখতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’ সবশেষে তিনি বলেছেন সাময়িকভাবে দুষ্কর মনে হলেও প্রত্যেক সুরঙ্গের শেষে আলোর দিশা মেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *