ইজরায়েল-হামাস সংঘাতের নেপথ্যে কারণ কী? কেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল পশ্চিম এশিয়া?

ইজরায়েল-হামাস সংঘাতের নেপথ্যে কারণ কী? কেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হল পশ্চিম এশিয়া?

israel

জেরুজালেম: শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা হবে৷ তখনও ভালো ভাবে ঘুম ভাঙে শহরগুলোর৷ আচমকা আকাশ ঢাকা পড়ল কালো মেঘে৷ ইজরায়েলের উপর শুরু হল মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্রের বর্ষণ৷ আচমকা হামলায় তখন বিহ্বল গোটা দেশ৷ খানিক পরে জানা গেল গাজা সীমান্তে আক্রমণ হেনেছে প্যালেস্টাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস৷ সেই থেকে চলছে লড়াই৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কঠিন হয়ে উঠছে পরিস্থিতি৷ ইতিমধ্যেই দু’পক্ষের মোট ১,১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর৷ মৃতদের মধ্যে রয়েছেন মহিলা এবং শিশুও।

শুক্রবার গভীর রাত থেকেই আকাশ, জল এবং স্থল- তিন পথেই ইজরায়েলকে ঘিরে ফেলেছিল হামাস। ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় গোলা বর্ষণ৷ হামাস গোষ্ঠী এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। তবে হাত পা গুটিয়ে নেই ইজরায়েলও৷ ২২টি অঞ্চলে হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে ইজরায়েল সেনার৷ 

হামাসের এই আক্রমণে আমেরিকার বহু নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, দাবি জানিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন৷ ভূমধ্যসাগরে রণতরী এবং যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে বলেও জানিয়েছে আমেরিকা৷ 

তবে ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলের এই সংঘাত নতুন নয়। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠনের শুরু থেকেই বারবার সংঘাতে জড়িয়েছে দুই দেশ৷ যা অশান্ত করেছে গোটা পশ্চিম এশিয়াকে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতের চরিত্রগুলি পাল্টেছে অবশ্য। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানসূত্র আজও মেলেনি। বরং পশ্চিম এশিয়ার স্থানীয় সমস্যা থেকে এটি এখন আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সংঘাত ক্রমশও জটিল করে তুলছে এলাকার ভূ-রাজনীতিকেও।

শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতের নেপথ্যে অনেকেই ইরানের ছায়া দেখছেন। হামাস জঙ্গিদের অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে ইরান সাহায্য করছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির একটা বড় অংশ৷  ইরানকে নিয়ে যখন জল্পনার পারদ চড়ছে, তখন ইরানের মুখ্য ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা জানিয়ে দিলেন, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের এই যুদ্ধকে সমর্থন করছে তেহরান।

এখন প্রশ্ন হল, কেন ইজরায়েল সঙ্কটে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে বিশ্বের একাধিক শক্তিধর দেশগুলি? চলতি সংঘাতের প্রেক্ষাপট লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের গর্ভে৷ সাল ১৯১৮৷ সবে শেষ হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ৷ তুরস্ক এবং সংলগ্ন এলাকা তখন দখল নিয়েছে ব্রিটেন৷ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদি শরণার্থীদের জন্য একটি দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে তৈরি হল ইজরায়েল।  ঠিক হয় প্যালেস্টাইনকে ভেঙে তৈরি করা হবে নতুন দেশ ইজরায়েল৷ এবং তাতে হস্তক্ষেপ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ৷ কিন্তু ইজরায়েলের ভৌগলিক অস্তিত্বকেই অস্বীকার করল আরব দেশগুলি। এর পর জেরুজালেমের অধিকার নিয়েও শুরু হয় যুযুধান দুই পক্ষের লড়াই। কারণ খ্রিস্টান, ইহুদি এবং ইসলাম— তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছেই পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই শহর।

সংঘাতের তীব্রতায় জটিল হতে থাকে ইহুদি এবং আরবের সম্পর্ক। ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে দ্বিবিভক্ত হয়ে যায় গোটা বিশ্ব৷ আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলি পাশে দাঁড়ায় ইজরায়েলের৷ অন্যদিকে, ইজরায়েল এবং পশ্চিমি শক্তিগুলির সঙ্গে প্যালেস্তাইনের হয়ে দর কষাকষি শুরু করেন প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র প্রধান ইয়াসের আরাফত। কিন্তু সমাধানসূত্র না মেলায় প্যালেস্তাইনের রাজনৈতিক মঞ্চে মাথাচাড়া দেয় হামাস। ১৯৮৭ সালে সুন্নি মুসলিম সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর রাজনৈতিক শাখা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ শুরু হয় চোরাগোপ্তা আক্রমণ৷ এর জন্য বিতর্কে জড়ালেও,  ২০০৬ সালের প্যালেস্তাইন নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন পায় হামাস৷  তাদের রুখতে গাজা সীমান্ত প্রায় বন্ধ করে দেয় ইজরায়েল এবং মিশর। সম্প্রতি ফের ইজরায়েলের উপর আক্রমণ হানে হামাস৷ যুদ্ধ থামাতে কিছুতেই মিলছে না রফা সূত্র৷ জমা হচ্ছে লাশের পাহাড়৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + sixteen =