কলকাতা: যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে ইউক্রেন৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে সে দেশে সেনা অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া৷ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে নতুন করে তপ্ত আমেরিকা ও চিনের সম্পর্ক৷ মঙ্গলবার মার্কিন নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে টালমাটাল চিন-আমেরিকা সম্পর্কের ‘স্থিতাবস্থা’৷ রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার আগেই বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে এই তপ্ত পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগের৷
আমেরিকা ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপোড়েন অবশ্য নতুন নয়৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলেও এই সঙ্ঘাত ছিল৷ তবে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে নতুন করে দু’দেশের সম্পর্কের জলঘোলা হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি সরাসরি সঙ্ঘাতের রূপ নেয় কিনা তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছে৷ আর ইতিহাস বলছে, তাইওয়ান নিয়ে চিন-আমেরিকার এই স্নায়ুযুদ্ধ বহু পুরনো৷ এই অবস্থায় সঙ্ঘাত বাধলে কে এগিয়ে থাকবে? চিনের হাতে কী কী অস্ত্র সম্ভার রয়েছে?
আমেরিকার চেয়ে সামরিক খাতে চিনের খরচ অনেকটাই কম৷ তবে কূটনীতিবিদদের একাংশের মত, ড্রাগনের দেশের অনেক খবরই চিনের পাঁচিল টাপকাতে পারে না। ফলে খাতায়কলমে চিনের সামরিক খরচ আমেরিকার চেয়ে কম মনে হলেও তা হয়তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র।
চিনের হাতে রয়েছে শক্তিশালী পদাতিক সেনা৷ রয়েছে প্রচুর ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি। কিন্তু চিনের আসল শক্তি হচ্ছে তার শক্তিশালী নৌবহর। সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, চিনা নৌবহর বিশ্বে সবচেয়ে বৃহৎ।
চিনা নৌবহরে রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। যেখানে ৪০-৬০টি বিমানের পাশাপাশি থাকতে পারে হেলিকপ্টার। চিনের ওই বিমানবাহী জাহাজের নাম ফুজিয়ার টাইপ ০০৩ এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার। ২০৪০ সালের মধ্যে চিনা নৌবহরের আকার আরও ৪০ শতাংশ বাড়বে ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ এখনই চিনের হাতে রয়েছে আকাশ এবং জলে চলতে পারে এমন উভচর বিমান। রয়েছে নানা শ্রেণির ডুবোজাহাজ এবং বিমান নামার জন্য বিশেষ যুদ্ধজাহাজ।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে চিন তার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও অন্তত চার গুণ বাড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হবে। তখন বেজিংয়ের হাতে থাকবে হাজার খানেক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড। জানা গিয়েছে, হাইপারসনিক অর্থাৎ শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ইতিমধ্যেই জোর দিয়েছে চিন। যদিও চিনের অস্ত্র ভাণ্ডারে কী কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই৷ কারণ হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে বেজিং। তবে গত বছরই চিনের হাতে ঘণ্টায় ১২ হাজার ১৬৯ কিমি গতিবেগে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তি এসে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের হাতে দু’ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। একটি হাইপারসনিক গ্লাইড ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি অনেক উঁচু দিয়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে। অপরটি ফ্র্যাকশনাল অরবাইটাল বম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (এফওবিএস), যা নিচু দিয়ে উড়ে গিয়ে লক্ষ্য ভেদ করে।
মনে করা হয়, চিন ‘রেলগান’ নামক একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে৷ যা আসলে দু’টি রেললাইনের উপর বসানো একটি দৈত্যাকার বন্দুক। তড়িৎচৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে সেই বন্দুক থেকে গোলার মতো বড় আকারের বুলেট ছোড়া হয়৷ ওই বুলেটের গতি শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি৷
এছাড়াও চিনের হাতে রয়েছে ‘মাদার অফ অল বম্ব’৷ যা সাধারণত বোমারু বিমান থেকে ছোড়া হয়৷ রয়েছে যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী ‘ক্যারিয়ার কিলার’ ক্ষেপণাস্ত্র৷ রাডারকে ফাঁকি দেওয়া ড্রোন৷ এমনকী রাডার-এর চোখ এড়িয়ে যাওয়া যুদ্ধ বিমানও রয়েছে চিনের হাতে৷
চিনের হাতে থাকে একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র হল ‘সোনালি ঈগল’৷ ‘সিআর-৫০০ গোল্ডেন ঈগল’ নামে মানববিহীন ওই হেলিকপ্টার নিুক্ত রয়েছে ড্রাগনের সুরক্ষায়। সম্প্রতি চিন দাবি করেছে, আগের থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাশালী সেনা বাঙ্কার ধ্বংস করার মতো বোমা তাদের হাতে রয়েছে।
এসবেরও চেয়েও চিনের ভয়ঙ্কর অস্ত্র হল সাইবার হানা। চিনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে বার বার সাইবার হানার অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ। চিন-আমেরিকা যুদ্ধ বাধলে তাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে এই চিনা হ্যাকাররা।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>