কিভাবে একসাথে এতগুলো ডিভাইসে বিস্ফোরণ? লেবাননে পেজার হামলার পরতে পরতে রহস্য!

দিল্লি: কিভাবে একসঙ্গে লেবাননে হাজার হাজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটালো ইসরাইল?পেজার বিস্ফোরণে ধুরন্ধর মোসাদের ব্লু প্রিন্ট ফাঁস!ছেড়ে কথা বলবেনা হেজবোল্লা! সব জায়গায় লেখালেখি হচ্ছে, একের পর…

Picsart 24 09 19 03 55 34 229

দিল্লি: কিভাবে একসঙ্গে লেবাননে হাজার হাজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটালো ইসরাইল?পেজার বিস্ফোরণে ধুরন্ধর মোসাদের ব্লু প্রিন্ট ফাঁস!ছেড়ে কথা বলবেনা হেজবোল্লা!

সব জায়গায় লেখালেখি হচ্ছে, একের পর এক ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। ধারাবাহিক পেজার বিস্ফোরণ ঘিরে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। কিন্তু কি এই পেজার? মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই যন্ত্র। এর বিশেষত্ব হল পেজারের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাক করা যায় না। ফলে ফোন ট্যাপিং থেকে বাঁচতে জঙ্গিরা এই যন্ত্র ব্যবহারেই প্রাধান্য দেয়। মূলত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ পাঠায় ও গ্রহণ করে এই পেজার। ডিভাইসটার ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়। একটা সময় গোটা বিশ্বে এই যন্ত্র ব্যবহার হলেও মোবাইল আসার পর এর ব্যবহার কমেছে। কিন্তু লেবাননের হেজবোল্লা গোষ্ঠীর কাছে এই পেজার যেন মোক্ষম অস্ত্র। আর সেটা বুঝতে পেরেই, ইসরাইল কি এর সুযোগ নিলো?

সকালটা ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। কিন্তু ঠিক দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ আচমকাই গোটা দেশজুড়ে পরপর পেজার ব্লাস্ট করতে শুরু করে লেবানন ও সিরিয়ার কিছু অংশে। কারও হাতে তো কারও পকেটে থাকা পেজার পর পর ফাটতে থাকে। লুটিয়ে পড়ে মানুষ। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রাণে বাঁচতে শুরু হয় ছোটাছুটি। পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। আহত হাজার হাজার মানুষ। মৃত ও আহতদের মধ্যে অধিকাংশই হেজবোল্লা জঙ্গি।জঙ্গিদের পাশাপাশি আহত বহু সাধারণ মানুষ। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রদূতও।

গোটা ঘটনার পেছনে ইসরাইলি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি মোসাদের হাত দেখছে হেজবোল্লা গোষ্ঠী।

পরিকল্পিত হামলা বলে ইসরাইলের দিকে আঙুল তুলেছে হেজবোল্লা। ইসরাইলের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। যদিও ইসরাইল এই বিষয়ে প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো একসাথে এতো এতো পেজার বিস্ফোরণ, কিভাবে সম্ভব? পেজার বিস্ফোরণের রিমোট সত্যিই কী মোসাদের হাতে?

সূত্রের খবর, ইসরাইলি নজরদারি এড়াতে চলতি বছরের শুরুতে ব্যাপকভাবে নেট বিহীন পেজার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী হেজবোল্লা। প্রায় ৫ মাস আগে লেবাননের হেজবোল্লা গোষ্ঠী ৫ হাজার তাইওয়ান পেজারের অর্ডার ও দিয়েছিল। জানা যাচ্ছে, হেজবোল্লা জঙ্গিদের ব্যবহারের জন্য অর্ডার দেওয়া সেই পেজার হেজবোল্লার হাতে যাওয়ার আগেই যন্ত্রগুলো মোসাদের হাতে পড়ে যায়। ডিভাইস গুলোর ব্যাটারির উপর অত্যন্ত সাঙ্ঘাতিক বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেয় ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ। তারপর সেগুলো লেবাননে পাঠায় তাঁরা। এরপর শুরু হয় আসল খেলা। দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে গত মঙ্গলবার পরিকল্পিতভাবে সবকটা পেজারে একত্রে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একদম ভেতরের খবর, বিস্ফোরণের ঠিক আগে এদিন পেজার গুলো মারাত্মক গরম হয়ে ওঠে। এরপরই সেগুলো বিস্ফোরিত হতে শুরু করে।

কিন্তু এমনি এমনি তো ইসরাইলি মোসাদ টার্গেট করবেনা হেজবোল্লাকে। হিসেবটা পুরোনো। হামাস ইসরাইল যুদ্ধ। ইসরাইলি অভিযান হামাসকে কাবু করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু প্রতিশোধের আগুন জ্বলেছে লেবাননের বুকে। লেবাননের হেজবোল্লা ইসরাইলকে ধ্বংস করতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছে। এটাই স্বাভাবিক। মনে করিয়ে দিই, ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে গত শতকের আশির দশকে ইরান হেজবোল্লা গড়ে তোলে। দেশটার সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে হেজবুল্লার পাশে থাকে ইরান। লেবাননের রাজনীতিতেও যাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সেই হেজবোল্লার সঙ্গে ইসরাইলের পেরে ওঠা সহজ নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তাই যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে নিজেদের জাহির করল মোসাদ, হেজবোল্লা গোষ্ঠী তার জবাবে ঠিক কতগুণ বেশি ফিরিয়ে দেবে, সেটা জানতে শুধুমাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, অলরেডি এদিনের এই ধারাবাহিক পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে হেজবোল্লা ও লেবাননের সরকার। এমনকি পাল্টা হামলা চালানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু দেখার ইসরাইল প্রতিপক্ষের অ্যাটাককে কতটা শক্ত হাতে সামলাতে পারে নেতানিয়াহুর দেশ।