সাক্ষাৎ লঙ্কাপুরী! প্রাণ বাঁচতে নৌসেনা ঘাঁটিতে লুকিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

সাক্ষাৎ লঙ্কাপুরী! প্রাণ বাঁচতে নৌসেনা ঘাঁটিতে লুকিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

 

কলম্বো: প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগের পরেই জনরোষের মুখে পড়েছেন আরও ভয়াবহভাবে। ইতিমধ্যেই দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমানে যারা ভয়ঙ্কর বিক্ষোভকারীর রূপ ধারণ করেছেন তাঁরা জ্বালিয়ে দিয়েছেন স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে প্রাণভয়ে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে স্বয়ং রাজাপক্ষেকে, যিনি কাল পর্যন্ত ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর ইতিমধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা জেনে গিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারকে নিয়ে নৌসেনা ঘাঁটিতে লুকিয়ে রয়েছেন। আর তাই তাঁরা ইতিমধ্যেই ওই ঘাঁটিতে পৌঁছে গোটা এলাকা ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন বলে খবর। অভাবের তাড়নায় দেশের মানুষ যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, এবং প্রয়োজনে তাঁরা দেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত ক্ষমতাই এক লহমায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারে আজ তারই প্রমাণ দিচ্ছে ‘লঙ্কাপুরী’ শ্রীলঙ্কা।

উল্লেখ্য, সোমবার মধ্যরাতে খবর পাওয়া যায় বিক্ষুব্ধ জনতার উপর শ্রীলঙ্কার এক সংসদ গুলি চালানোর পরে পরিস্থিতি কার্যত হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এদিন রাতেই বিক্ষুব্ধ জনতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে খবর মেলে প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে একটি নৌ সেনা ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই খবর পাওয়া যায় যে বিক্ষুব্ধ জনতা জেনে যায় এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যেই তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গোটা এলাকা ঘিরে সেখানেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

 অন্যদিকে আবার শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়সহ বহু বিশিষ্ট মানুষজন। তাঁদের দাবি, আজ যে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে দেশ তার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি সরকারপন্থী কিছু মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য। সোমবার এই সমস্ত সরকারি সমর্থকরা রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ এবং তাঁদের বাগে আনতে পুলিশকে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়। এরপর সোমবার রাতে রাজভবনের ভিতর থেকেই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান এক সাংসদ। পরে তিনিও আত্মঘাতী হন। এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে আহতের সংখ্যা দেড়শো পার করেছে। এই গোটা পরিস্থিতির জন্য রাজাপক্ষকে দায়ী করে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মৈথরিপালা সিরিসেনা। তাঁকে সমর্থন করেছেন সাংসদ সুমন্থীরন। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান দেশবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে আবার বিরোধীরা যত শীঘ্র সম্ভব পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার দাবি তুলেছেন। আপাতত দেশকে শান্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। জানা যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গতাবায়া রাজাপক্ষে লঙ্কান বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন যে দেশের মধ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করলে তাঁদের যেন দ্রুত দমন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 11 =