মানবতার দীক্ষা! ২৪ হাজার পরিবারের মুখে অন্ন যোগাচ্ছেন ভারতীয় পঙ্কজ

মানবতার দীক্ষা! ২৪ হাজার পরিবারের মুখে অন্ন যোগাচ্ছেন ভারতীয় পঙ্কজ

নাইরোবি: মানবতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাটাই পাল্টে দিয়েছিলেন মাদার টেরিজা৷ তাঁর মধ্যে মানবতা ও করুণার অন্য এক রূপ দেখেছিল মানুষ৷ মানবতার সেই ধর্মে দীক্ষিত হয়েই কেনিয়ার কয়েক হাজার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক সাফারি অপারেটর৷ ২৪ হাজার পরিবারের দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে৷ 

করোনায় তোলপাড় গোটা বিশ্ব৷ কোভিড-১৯ সংক্রমণ রুখতে কেনিয়া জুড়ে চলছে লকডাউন৷ বন্ধ হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের উপার্জন৷ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে  হাজার হাজার মানুষ৷ এই দুর্দিনে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালেন পঙ্কজ শাহ৷ ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মুখে তুলে দিলেন আহার৷ 

খিদের জ্বালায় দগ্ধে মরা মানুষগুলোর আর্তনাদ নাড়া দিয়ে গিয়েছে পঙ্কজ শাহকে৷ তিনি বলেন, ‘‘ওরা ক্ষুধার্ত এবং ক্ষুব্ধ৷ ওদের পাশে দাঁড়াতেই হবে৷’’ এর পরেই সমাজসেবা মূলক কাজে আগ্রহী মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন শাহ৷ তাঁকে এই কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বেশ কিছু মানুষ৷ শাহ বলেন, সৌভাগ্যবশত লকডাউনে বন্ধ থাকা একটি স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ক্যাম্পাস ব্যবহারের অনুমতি দেয় আমাদের৷ আপাতত সেখানেই গড়ে উঠেছে আমাদের হেডকোয়াটার্স৷ 

তিন বছর আগে কেনিয়ার এশীয় সম্প্রদায় সেদেশের ৪৪ তম উপজাতির স্বীকৃতি পায়৷ এই সংকটে গরিব-দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে একজোট হয়ে এগিয়ে এসেছেন তাঁরা৷ ট্রাক বোঝাই করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে অসহায় মানুষগুলোর দরবারে৷ 

লকডাউনের জেরে স্থগিত হয়ে গিয়েছে যাবতীয় উড়ান৷ ফলে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী রফতানি করা সম্ভব হয়নি৷ সেই খাবার ট্রাকে করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুঃস্থদের কাছে৷ গত ২২ মার্চ থেকে ইতিমধ্যে ২৪ হাজার বাক্স খাবার সরবরাহ করা হয়েছে৷ প্রতিটি বাক্সে রয়েছে পর্যাপ্ত খাবার৷ একটি বাক্স দিয়েই হেসেখেলে দুই সপ্তাহ চালিয়ে দিতে পারবে পাঁচজনের একটি পরিবার৷ 

পঙ্কজ রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘এক বৃদ্ধ মহিলা একদিন আমাদের এসে বলেন, কয়েকদিন ধরে পেটে এক ফোঁটা দানাপানি পড়েনি তাঁর৷ ছেলের রোজগার বন্ধ৷ তাই সেও কোনও সাহায্য করতে পারছে না৷’’ এই কথাগুলোই নাড়া দিয়ে গিয়েছিল পঙ্কজকে৷ মাদার টেরিজার আদর্শে অনুপ্রাণিত পঙ্কজ দীর্ঘদিন ধরেই সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত৷ তিনি জানান, নাইরোবিতেই কয়েক দশক আগে মাদার টেরিজার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর৷ মাদারের দীক্ষাতেই দীক্ষিত তিনি৷ কেনিয়ার বিত্তশালী মানুষদের কাছে তাঁর আর্জি, তাঁরা যেন মানুষের সেবার এগিয়ে আসেন৷ তাঁদের ৪,০০০ কেনিয়া শিলিংস (ভারতীয় মুদ্রায় ২,৮৯০ টাকা) দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন পঙ্কজ৷ তিনি বলেন, এই টাকা তো একটা পিৎজা আর এক বোতল মদের দাম দিতেই চলে যায়৷ যদি কেনিয়ার অর্ধেক ধনী এই সামান্য টাকা দিয়ে মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলেই যথেষ্ট৷ 

তিনি জানান, গত সপ্তাহে ডিপ সি’র বস্তি এলাকায় দুটি খাবার বোঝাই লড়ি পাঠানো হয়েছে৷ টোকেনের মাধ্যমে এই খাবার বিলি করা হচ্ছে৷ খাবার বিতরণের জন্য ফিঙ্গার লিঙ্কও করা হয়েছে৷ গর্ভবতী মা এবং সদ্য মায়েদের বিশষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে৷


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 13 =