স্বাধীনতার ৭৩ বছরের মধ্যে কী ভাবে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠল পাকিস্তান?

স্বাধীনতার ৭৩ বছরের মধ্যে কী ভাবে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠল পাকিস্তান?

তপন মল্লিক চৌধুরী: স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ৭৩ বছরের মধ্যেই একটি দেশের বিশ্বজুড়ে পরিচয় অন্যতম সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র। দুনিয়াজুড়ে সন্ত্রাসবাদী গড়ার কাজে সিরিয়াকেও টেক্কা দেয় পাকিস্তান।

ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক জঙ্গি সংগঠনগুলির তথ্য ও পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে,  প্রায় সবক’টি সন্ত্রাবাদী সংগঠনের ঘাঁটি হল পাকিস্তানে। সেই সব সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ক্রমাগত বাড়বৃদ্ধি, মানবঘাতী অস্ত্রের অপব্যবহার এবং অর্থনৈতিক ভাঙন মানবসভ্যতার অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে।

ভারত  পাকিস্তান একই সঙ্গে স্বাধীন হয় (যদিও ভারতের একদিন আগে স্বাধীনতা দিবস পালন করে পাকিস্তান)। কিন্তু ৭৩ বছরে একটি রাষ্ট্রের এই অবস্থা কেন? পাকিস্তান স্বাধীনতার ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মুখ দেখে। এই দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রের পথে না হাঁটলেও পাকিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল হয়েছে, আর তা হয়েছে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ছাড়াই। রাষ্ট্রচালনায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অযথা দেরি হওয়ায় পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় নাক গলানোর সুযোগ পেয়েছে সেনাবাহিনী।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ মানে সব দিক থেকেই সেই রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এর অন্যতম কারণ হল, এটি কোনও আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। যে কোনও দেশ, প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তির সাফল্যেও নীতি বা আদর্শ হল জরুরি। যেটা পাকিস্তানে নেই বললেই চলে।  

বলা হয় ইসলামের ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তানের জন্ম। যদি তাই হয়, তবুও কিন্তু পাকিস্তানের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই ইসলাম-পরিপন্থী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতানুসারে এ কথাও বলা যায় যে,  প্রতারণা-প্রবঞ্চনার মাধ্যমেই জন্ম হয়েছে দেশটির। পাকিস্তান গণতান্ত্রিক নাকি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র,  তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ পাকিস্তানে যখন যিনি ক্ষমতায় বসেছেন, তিনি তার খেয়ালখুশি মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।

পাকিস্তানে জাতিগত দমন-পীড়নও রয়েছে ভীষণ ভাবে। যেটাকে বিশেষজ্ঞরা রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের ব্যর্থতার বড় কারণ বলে মনে করেন। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটির শাসকবর্গ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান একের পর এক ব্যর্থতার রেকর্ড গড়ে চলেছে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এখনও বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। এমনকি দেশটির মহিলারাও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার। মহিলাদের পিছিয়ে রেখে কোনও দেশই আজ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। সামরিক শাসন পাকিস্তানের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই পাক সেনাবাহিনী দেশটির নেতৃত্বে ছিল। দেশটির কোনও সরকারই সেনাবাহিনীর ইচ্ছা ছাড়া যেমন ক্ষমতায় আসতে পারেনি, তেমনই পাকিস্তানের শাসননীতিতে সেনবাহিনীর মতই শেষকথা।

পাকিস্তানে সরকারের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি পাকিস্তানের সরকারি ব্যবস্থাকে সব সময়ই দুর্বল করে রেখেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামরিক ব্যবস্থার টানাপড়েন সরকারি ব্যবস্থাকে সব সময়ই নানা ধরনের সমস্যায় ফেলে দেয়। যার ফলে দেশ হিসেবে পাকিস্তান ও সে দেশের শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক কাঠামোটাই হয়ে যায় ভীষণরকম গোলমেলে। অর্থাৎ চরম অব্যবস্থা বা শাসন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা পাকিস্তান রাষ্ট্রে চিরস্থায়ী। রাষ্ট্রের এই অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি।  

জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি যে কখন রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনটির উপর হামলা করে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই দেশটিতে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে একান্ত বাধ্য না হলে অন্য কোনও দেশ থেকে পাকিস্তানে যেতে চায় না মানুষ। হামলার আশঙ্কায় বহু দেশ সেখানে খেলত পর্যন্ত যেতে চায় না। এই ভাবে চলতে চলতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তাহলে কি পাকিস্তান রাষ্ট্রটি দিন দিন জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠেছে একাধিকবার। অথচ এক একটি হামলার পরই সন্ত্রাসের শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 5 =