FBI- এর প্রথম ১০ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় একমাত্র মহিলা! কে এই ‘ক্রিপ্টোকুইন’?

FBI- এর প্রথম ১০ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় একমাত্র মহিলা! কে এই ‘ক্রিপ্টোকুইন’?

নয়াদিল্লি: এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড ১০ জন অপরাধীর তালিকায়  তিনি একমাত্র মহিলা। তিনি পরিচিত ‘ক্রিপ্টোকুইন’ নামে৷ অভিযোগ, ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা খুলে  বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। কিন্তু কে এই ‘ক্রিপ্টোকুইন’? তাঁর আসল পরিচয়ই বা কি? 

আরও পড়ুন- ফের মিসাইল হামলা ইউক্রেনে, রাশিয়ান আঘাতে মৃত শিশু-সহ অন্তত ১৮

এফবিআইয়ের তালিকায় ‘ক্রিপ্টোকুইন’ নামে পরিচিত এই মহিলার আসল নাম রুজা ইগনাতোভা। তিনি একাধারে বুলগেরিয়া এবং জার্মানির নাগরিক৷ রুজার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, ভুয়ো সংস্থা খুলে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি ডলার ‘লুট’ করা৷ কিন্তু ২০১৭ সালের অক্টোবরে আচমকাই কোথাও গায়েব হয়ে যান ‘ক্রিপ্টোকুইন’। তার পর থেকে তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। কিন্তু, নাগাল পাওয়া যায়নি৷ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে৷ এফবিআই জানিয়েছে, যে বা যাঁরা ‘ক্রিপ্টোকুইন’ সম্পর্কে কোনও তথ্য দেবেন, তাঁকে এক লক্ষ ডলারের পুরস্কার দেওয়া হবে৷ ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ৭৯ লক্ষ টাকারও বেশি।

ruja

এফবিআইয়ের পাশাপাশি ইউরোপীয় গোয়েন্দাদের আতস কাঁচের নীচেও রয়েছেন রুজা। চলতি বছর মে মাসে তাঁকে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত করে ইউরোপোল। সেই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়, রুজা সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলেই মিলবে চার লক্ষ ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কার৷ বহু চেষ্টা করেও ইউরোপ হোক বা আমেরিকা, এখনও কোনও দেশের গোয়েন্দারাই রুজাকে ধরতে  পারেননি।

বছর ৪২-এর রুজা জন্মসূত্রে বুলগেরিয়ার বাসিন্দা৷ সে দেশের সোফিয়ায় জন্ম তাঁর। তখন ১০ বছর বয়স৷ পরিবারের সঙ্গে জার্মানির স্রামবার্গ শহরে চলে আসেন আজকের ‘ক্রিপ্টোকুইন’। সেখানেই বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা। মার্কিন গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, রুজা আর পাঁচটা অপরাধীর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। বরং তিনি উচ্চশিক্ষিত। আইনের জ্ঞানও রয়েছে তাঁর। বৃহস্পতিবার এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড ১০ জন অপরাধীর তালিকায় ঢুকে পড়েন ‘ক্রিপ্টোকুইন’৷

এফবিআই-এর দাবি, ২০০৫ সালে জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল ল’ নিয়ে পিএইচডি করেন রুজা। কেউ কেউ দাবি করেন, অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। পড়াশোনা শেষে ম্যাকিনসে-র মতো বহুজাতিক সংস্থাতেও কিছুদিন চাকরি করেছেন। ২০১১ সালে উরসুলায় একটি সালোঁতে বিনিয়োগ করেছিলেন রুজা। 

প্রথমবার রুজার অপরাধের পর্দা ফাঁস হয় ২০১২ সালে। তাঁর সঙ্গে অপরাধী ছিলেন তাঁর বাবা প্লামেন ইগনাতোভও। জার্মানির একটি সংস্থা অধিগ্রহণের মামলায় প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন মেয়ে ও বাবা। ওই মামলায় ১৪ মাসের সাজা হয়েছিল রুজার।

সম্ভবত কারাবাসের সময় থেকেই  অপরাধজগতে পাকাপাকি ভাবে ঢুকে পড়েছিলেন রুজা। ২০১৩ সালে বিগকয়েন নামে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির মার্কেটিং সংক্রান্ত প্রতারণায় নাম জড়ায় তাঁর৷ ২০১৪ সাল থেকে পাকাপাকি ভাবে লোকঠকানোর ব্যবসা ও জি স্কিমের কারবারে মাথা গলান তিনি৷ ওই বছরই অক্টোবর মাসে ওয়ানকয়েন নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি শুরু করেন বলে দাবি মার্কিন গোয়েন্দাদের। এর পর বিশ্ব জুড়ে জালিয়াতি কারবারের  জাল বিছাতে ইউটিউব-সহ একাধিক নেটমাধ্যমের সাহায্য নেন রুজা।

রুজা

২০১৪ সালে রুজা প্রচার শুরু করেন, ওয়ানকয়েনে বিনিয়োগ করলে প্রচুর মুনাফা মিলবে৷ বিনিয়োগকারীরা যত বেশি গ্রাহক এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সংস্থায় টেনে আনতে পারবেন, তাঁদের লাভ তত বেশি হবে৷ স্মার্ট, সুন্দর চেহারার উচ্চশিক্ষিত রুজার কথার জালে অনেকেই পা দিয়ে দেন৷ তাঁরা ওয়ানকয়েনে বিপুল বিনিয়োগ করেন। যদিও এফবিআইয়ের দাবি, ওয়ানকয়েন নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির (ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেনের ডিজিটাল মুদ্রা) আসলে শেয়ারবাজারে কোনও মূল্যই ছিল না। এমনকি, নেট দুনিয়ায় ব্লকচেন নামে যে প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ হয় এবং যার মাধ্যমে গেলে বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকে, সেই সুরক্ষাও ছিল না ওয়ানকয়েনের।

লোকঠকানোর এই ব্যবসায় নাম রয়েছে  রুজার বাবা ও ভাই কনস্ট্যানটিন ইগনাতোভেরের৷ তবে এফবিআই বলছে, বাবা ও ভাইকেও ছাপিয়ে গিয়েছে রুজার অপরাধ৷