নির্মূল হবে না ভাইরাস, কয়েক দশক বেঁচে থাকতে পারে করোনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

নির্মূল হবে না ভাইরাস, কয়েক দশক বেঁচে থাকতে পারে করোনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ওয়াশিংটন:  আগামী কয়েক দশকে করোনা নির্মূল করা সম্ভব হবেনা, এমনকি কোনো প্রতিষেধকেও এই ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল করতে পারবেনা। বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে ঘুরেফিরে এই নোভেল করোনা ভাইরাস তার সংক্রমণ জারি রাখবে। এইমুহুর্তে গবেষকদের এই ভবিষ্যৎ বাণী বিশ্বের মানুষের কাছে আতঙ্ক ও দুর্বিষহ মনে হলেও জেনে নেওয়া জরুরী যে ঠিক কি বলতে চাইছেন তাঁরা।

এবিষয়ে মহামারীবিদ, দুর্যোগ পরিকল্পনা ও ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞরা আমেরিকার উদাহরণ তুলে ধরে বলতে চেয়েছেন, মহামারী পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবতাটিকে গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘ একটা সময় ধরে ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়ে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে থাকলে বিশ্ব অচল হয়ে যাবে। বরং করোনার এই নাছোড় প্রকৃতি জনগণের কাছে একটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের সরকারগুলির কোটি টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দমনের।

এমনিতেই বিশেষজ্ঞরা কিছু রোগকে স্থায়ী রোগ বলে আখ্যায়িত করেন যে রোগগুলি অত্যন্ত জেদী প্রকৃতির এবং তাদের প্রতিরোধের প্রক্রিয়াকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাম, এইচআইভি, চিকেনপক্সের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ করোনার ভবিষ্যতও অনেকটা এই রোগগুলির মতন হবে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারীবিদ এবং বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী সারা কোবে বলছেন,” এই ভাইরাসটি এখন থাকবে, প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কীভাবে এর সাথে নিরাপদে বাস করব?”

গবেষকরা জানিয়েছেন বহু অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে নোভেল ভাইরাস নিয়ে গবেষণা থেকে ভবিষ্যতের বিষয়ে সামান্য কিছু জানা সম্ভব হয়েছে।। তবে এর অর্থ এই নয় যে পরিস্থিতি সবসময় এতটাই ভয়াবহ থাকবে। ইতিমধ্যে চারটি স্থানীয় করোনাভাইরাস রয়েছে যা নিয়মিতভাবে সংক্রমিত হয়, ফলে সাধারণ সর্দি হয়। এবং অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এই ভাইরাসটি এদের মধ্যে পঞ্চম। প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির  সাথে সাথে এর প্রভাবগুলিও অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে এবং আমাদের শরীর সময়ের সাথে সাথে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আপাতত, যদিও, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ সংক্রামিত হয়নি এবং সংবেদনশীলও রয়েছেন এবং চলতি কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণ ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। এমনকি এমন দেশগুলিতেও যা প্রাথমিকভাবে এটি দমন করতে সফল হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সাধারণ ভাবে বিশ্বের জনসংখ্যার কিছু অংশের মধ্যে নিজের দাপট বজায় রাখবে।

মহামারীবিদ সারা কোবের মতে, কোনো স্থায়ী রোগ মোকাবিলায় যা প্রয়োজন তা হলো, দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা, কার্যকরী প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। সত্যিই যদি এই রোগটি কয়েক দশক স্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন হবে সময়, অর্থ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ভ্যাকসিন যখন মানবদেহে এর গ্রহনযোগ্যতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – সেখানে এই রোগটি নির্মূল করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।  সীমাবদ্ধ সরবরাহ, অ্যান্টি-ভ্যাকসিন বিরোধীতা এবং উল্লেখযোগ্য যুক্তিগত বাধা সহ টিকা দেওয়ার চ্যালেঞ্জগুলি ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সিডিসি-র প্রাক্তন পরিচালক টম ফ্রাইডেন বলছেন,” বলা যায় আমাদের মনোযোগ-ঘাটতির ব্যাধি রয়েছে। আমরা যা কিছু করছি তা হ'ল স্বল্পমেয়াদি।”  “মানুষ আমাকে জিজ্ঞাসা করেই চলেছে, যে আমাদের এমন কিছু একটা করা যাবে? ’আমাদের মে একটাই কাজ করতে হবে, তাহলো বুঝতে হবে যে একটা কিছু করলে হবেনা। আমাদের একটি বিস্তৃত যুদ্ধের কৌশল দরকার, মা সতর্কতার সাথে প্রয়োগ করা যায়। পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা বলছে মানুষ। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রোগের জৈব পরিসংখ্যানবিদ নাটালি ডিন বলছেন, করোনার মত স্থায়ী রোগের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনযাপন কখনোই স্বাভাবিক হবেনা। সুতরাং এর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে চলার উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং কোনটা কার্যকরী তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। এভাবেই আমাদের সমাজ ও জীবন পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করতে হবে।

(তথ্যসূত্র- দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট৷ আরও বিস্তারিত দেখুন- https://www.washingtonpost.com/health/2020/05/27/coronavirus-endemic/?outputType=amp#referrer=https://www.google.com)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *