করোনা’র বন্দি থেকে অপূর্ব শিল্পের নজির! বিশ্বে প্রথম ট্যাটু গাড়ি উপহার শিল্পীর

বিশ্বের প্রথম ট্যাটু আর্ট গাড়ি তৈরীর নজির গড়লেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লন্ডনের 'রেড পয়েন্ট ট্যাটু' স্টুডিওর দুই মূল কর্ণধার ক্লডিয়া ডে সাবে ও ইউতারো দম্পতি। ট্যাটু করার পর লেক্সাসের ইউএক্স মডেলের এই গাড়িটির আনুমানিক মূল্য ১৪৬,০০০ ডলার করার কথা চিন্তা ভাবনা করছে কম্পানি।

ওয়াশিংটন: করোনার আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে মানুষের এখন প্রায় বন্দীদশা। একান্তই প্রয়োজন ছাড়া বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বাধ্যতামূলক না হলে সচরাচর বাইরে বের হচ্ছেন না কেউই। কারণ করোন সংক্রমণ রোধের সর্বোত্তম উপায় হল সংশ্পর্শ এড়িয়ে চলা। তাই আপাতত কাজ বন্ধ লন্ডনের স্বনামধন্য ট্যাটু শিল্পী ক্লডিয়া ডে সাবে ও ইউতারো দম্পতির। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লন্ডনের 'রেড পয়েন্ট ট্যাটু' স্টুডিওর দুই মূল কর্ণধার। 

দীর্ঘ ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা। ব্যস্ততাও তাই সর্বক্ষণের সঙ্গী। তাই করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দী দশায় কার্যত কর্মহীন ক্লডিয়া হাঁপিয়ে উঠছিলেন। অবশেষে নিজের স্টুডিওতে বসে সময় কাটানোর জন্য নিজের সবথেকে পছন্দের কাজটিকেই বেছে নিলেন। অর্থাৎ ট্যাটু তৈরী। কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে তো আসা যাবেনা তাই আস্ত একটা গাড়ির দেহেই ট্যাটু করে ফেললেন। যদিও তাঁদের এই পরিকল্পনা বহুদিনের। যা এই বন্দিদশায় একটু আশার আলো দেখিয়েছে। তবে তার যে গোটা বিশ্বে নজির স্থাপন করবে এতটাও ভাবেননি।  বিশ্বে এই প্রথম কোনও গাড়িতে হাতে ট্যাটু করা হল। আর সেই অর্থে এই প্রথমবার ধাতব দেহে ট্যাটু করলেন ক্লডিয়া। তৈরি করলেন বিশ্বের প্রথম ট্যাটু আর্ট গাড়ি। সঙ্গে ছিলেন অবশ্যই এই কাজে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী এবং জীবনসঙ্গী ইউতারো। ট্যাটু শিল্পে এই দম্পতি মূলত জাপানি ধাঁচের ছবির জন্যই প্রসিদ্ধ। অসাধারণ শিল্প দক্ষতার সঙ্গে একটি সাদা গাড়ির দেহে আপাদমস্তক ট্যাটু করে ফেললেন। ফুটিয়ে তুললেন জাপানের ঐতিহ্যবাহী 'কোই' চিত্রণের মাধ্যমে দুটি বিশাল মাছ 'গোল্ড ফিস'। জাপানে 'কোই' মোটিফকে সৌভাগ্য ও সংরক্ষণের প্রতীক বলে মনে করা হয়। নানান রঙের সুসামঞ্জস্য, অসীম ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ের মেলবন্ধনে একটি গাড়ি যেন হয়ে উঠলো রূপকথার গল্পের মতো।  

ট্যাটু করার জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন জাপানের বিশ্বখ্যাত অভিজাত ব্র্যান্ডে লেক্সাসের ইউএক্স মডেলের একটি গাড়িটি। কারণ, এর সুন্দর গঠন এবং ট্যাটু করার মত পর্যাপ্ত জায়গা। তবে ট্যাটু করার পর গাড়িটির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেনি কম্পানি। কারন এটি এমন একটি বিশেষ এবং বিরল গাড়ির মাত্রা পেয়েছে যে আপাতত এর আনুমানিক মূল্য ১৪৬,০০০ ডলার করার কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে, যা টাকার অঙ্কে এক কোটিরও বেশি। কিন্তু ক্লডিয়া দম্পতির সৃজনশীলতার কাছে এই মূল্য হার মেনেছে। অভিজাত ব্র্যান্ডের এই গাড়ির তুলনায় এর ওপর করা শিল্পকর্ম এখানে অনেক বেশি প্রকট। এই শিল্পকর্মে বেশ নতুনত্বও রয়েছে। 

একটি বিশেষ ধরণের ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে গাড়ির ধাতব দেহে ট্যাটু তৈরী করেন ক্লডিয়া। যাতে সেই অংশগুলি থেকে সাদা রঙ চটে গিয়ে একটি হালকা ছাঁচ তৈরি হয়। এবার এই ট্যাটুর ছবি রঙিন করে ফুটিয়ে তুলতে ৫ লিটার ভালো মানের গাড়ির রঙ ব্যবহার করেন। ট্যাটুর ছবি গুলিকে আরো নিখুঁত করতে এবং থ্রিডি এফেক্ট দিতে   ফিনিশিং টাচ হিসাবে হাইলাইট করেছেন সোনার পাত ব্যবহার করে। সবশেষে গাড়িটিকে রাস্তায় চালানোর সময় ট্যাটুকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ ধরণের ল্যাকারের পরত দিয়েছেন।

বিগত ছমাস ধরে গাড়িতে ট্যাটু করার এই পরিকল্পনা করেছিলেন ক্লডিয়া। প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। করোনায় ঘরবন্দী হয়ে অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলো। এরজন্য প্রতিদিন ৫ থেকে আট ঘন্টা করে কাজ করেছেন। বলা বাহুল্য এই কাজ শুধু মানসিক নয়,বরং শরীরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত। কারণ গাড়ির ধাতব দেহে ট্যাটু করতে একনাগাড়ে ড্রিলের কম্পন সহ্য করেছে তাঁর হাত‌। তাঁর ওপর মানুষের দেহে ট্যাটু করতে গেলে তাঁকে সুবিধে মত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া যায় যেটা গাড়ির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। তবে সবমিলিয়ে এই শিল্পকর্মকে পরিকল্পনা ও ধারনার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত বলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =