বেজিং: চিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তার সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে এল। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মত পাওয়া গিয়েছে। কেউ কেউ আবার বাদুর বা সাপের মতো প্রাণীকে দায়ী করছেন। কেউ আবার দাবি করছেন, চিনের খাদ্যাভাসকে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোনও প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের দেহে এসেছে এই করোনাভাইরাস। মানুষের শরীরের মাধ্যমে এই করোনা ভাইরাস ক্রমে চিনে ছড়িয়ে পড়ছে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে চিনের উহান প্রদেশে নিউমিনিয়ায় কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু চিনকে সতর্ক করে। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই চিনের স্বাস্থ্য দপ্তর করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করে।
করোনাভাইরাসের সন্ধান মেলে তিনয়ের এর দশকে। বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকমে ২০১২ সালের এক গবেষণামূলক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মুরগির ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন‘ দেখা দিলে জানা যায় ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস (আইবিভি) এর মূল কারণ। আর ছয়ের দশকে প্রথমবারের মত মানুষের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পান বিজ্ঞানীরা। সায়েন্সএলার্ট ডটকম বলছে, এই ভাইরাসের রয়েছে চারটি জেনাস বা গণ এগুলো হল– আলফাকরোনাভাইরাস, বেটাকরোনাভাইরাস, গামাকরোনাভাইরাস এবং ডেলটাকরোনাভাইরাস। প্রথমটি বাদুর, শুকর, বিড়াল ও মানুষে সংক্রমণ ঘটায়। আর গামাকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় পাখি ও পোলট্রি প্রজাতির প্রাণি। তবে ডেলটাকরোনাভাইরাসে পাখি ও স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী উভয়ই আক্রান্ত হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. ওয়ালিদ জাভেদ হেলথলাইনকে বলেন, বহু ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসসহ সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এর মধ্যে চারটি সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়েই দেখা দেয় এবং এই ভাইরাস বহুদিন ধরেই ছড়িয়ে আছে । ২০০২ সালে প্রথম সার্স আক্রান্ত রোগী মিলেছিল চীনেই। ফ্লু উপসর্গের এই রোগে প্রায় ২৬টি দেশে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি মানুষ; মারা গিয়েছিল অন্তত আটশ জন। তবে মানব শরীরে কী করে এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছিল সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মার্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল সৌদি আরবে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ছিল মার্সের লক্ষণ।ধারণা করা হয়, ২০১২ সালের এই মহামারি ছড়িয়েছিল উট থেকে। এর প্রায় আট বছর পরে নতুন আতঙ্ক নিয়ে এসেছে নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস। এ করোনাভাইরাসের সাথে উহান শহরে একটি সি ফুড মার্কেটের যোগাযোগ পাওয়া যায়। তবে ওই বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ, সামুদ্রিক প্রাণীসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিকিকিনি হত। গত ১ জানুয়ারি এই বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।