বেজিং: করোনা ভাইরাসকে ‘চিনা ভাইরাস’ বা ‘উহান ভাইরাস’ বলা ঠিক নয়। বিশ্বজুড়ে চিনের প্রবাসীদের উপর যে বিদ্বেষমূলক আচরন করা হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। আমেরিকা তো সরাসরি এই ভাইরাস নিয়ে চিনকেই অভিযুক্ত ঠাউরেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দাবি করলো চিন। ভারতে চিনের দুতাবাসের মুখপাত্র জি রং বলছেন, চিন এই ভাইরাসের সৃষ্টিকর্তা নয়। করোনাভাইরাস আমরা তৈরি করিনি বা ছড়ায়নি।
চিন ও ভারতে করোনা প্রসঙ্গে জি রং জানিয়েছেন, উভয় দেশই মহামারির বিপদের সময়ে পারস্পারিক বার্তা প্রদান করেছে এবং একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, বিপদের সময় ভারত ওষুধ দিয়ে চিনকে সাহায্য করেছিল, সে ব্যাপারে তাঁরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্যে ভারতের প্রশংসা করি এবং ধন্যবাদ জানাই।’ পাশাপাশি আমেরিকার নাম না করে জি রং-এর দাবি, যারা করোনাভাইরাসের নাম নিয়ে চিনকে কলঙ্কিত করতে চাইছেন, তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন যে, মানবজাতির কল্যাণে চিন প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছে।
করোনা ভাইরাসের দাপট সবার প্রথমে দেখা যায় চিনের ইউহান প্রদেশে। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মারক ভাইরাসটি। আপাতত চিনে এর সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রভাব মারাত্মক। ইতিমধ্যেই করোনার জেরে পৃথিবীতে প্রায় ২২ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আক্রান্ত প্রায় ৪ লক্ষ কুড়ি হাজার।
মুশকিল হল, ভাইরাসটির উত্পাত্তি এবং চরিত্র সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে তেমন কোনও তথ্য নেই। বিজ্ঞানীদের একটা অংশ দাবি করেন, এটি কোনও প্রাকৃতিক সংক্রমণ নয়, বরং মনুষ্য সৃষ্ট। জৈবিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চিনই ভাইরাসটি তৈরি করেছে। এই অভিযোগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পেম্পেও করোনাভাইরাসকে ‘চিনা ভাইরাস’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ার পর বিশ্বব্যাপী চীনের বাসিন্দাদের বিদ্বেষেরও শিকার হতে হচ্ছে।
এরই প্রতিবাদ করেন ভারতে অবস্থিত চিনের দুতাবাসের মুখপাত্র জি রং। তাঁর সাফ কথা, চিন এই ভাইরাস তৈরি করেনি বা ছড়ায়নি। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকেই ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ শুরু করে। চিন সরকার একেবারে গোড়ার দিক থেকেই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী এবং উপযোগী পদক্ষেপ করার চেষ্টা করে চলেছে। তাছাড়া কোনও একটি ভাইরাসকে নির্দিষ্ট একটি দেশের তৈরি বলে এভাবে দেগে দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পষ্ট নির্দেশিকাও আছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য এবং প্রয়োজনের সময় ওষুধ ও চিকিত্সাও সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করার জন্য ভারত সরকারকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু এর একটি টুইটে দেখা যাচ্ছে, চিন ‘হু’ কে জানুয়ারি মাসে যে তথ্য দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী এই মারণ ভাইরাস মানুষের থেকে মানুষের দেহে ছড়ায় না। অনেকের অভিযোগ, এখানেই সত্যকে আড়াল করে গিয়েছে চিন। কারণ, চিন হু কে জানিয়েছিল এই রোগ মানব শরীর থেকে মানব শরীরে ছড়ায় না। কিন্তু ততদিনে চিনে কয়েক’শ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু ছড়িয়ে গিয়েছে। তাও এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য রাষ্ট্র সংঘের দপ্তরের হাতে তুলে দেয়নি চিন।