‘মাস্ক কিনব না খাবার?’ চরম যাঁতাকলে দক্ষিণ এশিয়ার অগণিত মানুষ

‘মাস্ক কিনব না খাবার?’ চরম যাঁতাকলে দক্ষিণ এশিয়ার অগণিত মানুষ

কাবুল: সুরক্ষার নাগপাশে কেঁদে মরে অভাগা মানুষের দল! 

একদিকে মারণ করোনাভাইরাসের তারণা, অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালায় কাতর পেট৷ শ্যাম রাখি না কূল রাখি? এই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে অগণিত মানুষ৷ বাইরে বেরলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে প্রায় প্রতিটি দেশের সরকার৷ কিন্তু মাস্ক কিনতে গেলে পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়া যে দায় হয়ে যায়৷ 

মাস্ক কিনলে পরিবারকে অভুক্ত রাখতে হবে৷ আর খাবার কিনলে বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই মুখোশ ছাড়া বেরতে হবে ভিড়ে ঠাসা রাস্তায়৷ এই দুইয়ের টানাপোড়েন পড়েছেন আফগানি শ্রমিক হায়াতুল্লা খান৷ করোনাভাইরাসের দাপটে তাঁর দৈনিক রোজগার এখন ১০০ টাকারও কম৷ দক্ষিণ এশিয়ার অসংখ্য গরিব মানুষের মতো পেটের জ্বালা মেটাতে নিরুপায় হয়ে তাঁকেও বেরতে হচ্ছে কাজে৷ প্রশাসনের কড়া নির্দেশ বাইরে বেরলো মাস্ক পরতেই হবে৷ কিন্তু মাস্ক কিনবেন কি করে? মাস্ক কিনলে যে খাওয়া জুটবে না৷ খান বলেন, ‘‘আজকে ১০০ আফগানিরও কম উপার্জন করেছি আমি৷ এই দিয়ে আমি কি করব? নিজের জন্য মাস্ক কিনব না পরিবারের জন্য খাবার?’’

করোনা পরিস্থিতিতে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে৷ মাস্কের চাহিদাও এখন তুঙ্গে৷ কোনও কোনও জায়গায় সাধারণ একটা মাস্ক বিকোচ্ছে ৫০০ টাকায়৷ যার জেরে একাধিক শহরজুরে তৈরি হয়েছে নতুন এক বৈষম্য৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে কয়েক লক্ষ মানুষকে৷  

দক্ষিণ এশিয়ার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মীনাক্ষি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউন সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর৷ করোনাভাইরাস নিশ্চিতভাবেই ধনী-নিঃস্ব, জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ করে না৷  কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে এর প্রভাব ভয়ঙ্কর৷ প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, আশ্রয় এবং মৌলিক চাহিদার উপর৷’’  সম্প্রতি ভারতের বিজনেস টাইকুন আনন্দ মহিন্দ্রা তাঁর ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে গাছের পাতা দিয়ে মাস্ক পরা এক মহিলা ও শিশুর ছবি পোস্ট করেছিলেন৷ সেইসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের যাবতীয় চাহিদার রসদ রয়েছে প্রকৃতির কাছে৷’’ পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে এই ট্যুইটটি ডিলিট করে দেন তিনি৷

শ্রীলঙ্কা সরকার ডিসপোজেবল সার্জারিকাল মাস্কের দাম ১৫ টাকা বেধে দিয়েছে৷ ভালো মাস্কের দাম ১৫০ টাকা৷ কিন্তু এই দামে মাস্ক মেলা দুষ্কর৷ কারণ, ওষুধের দোকানগুলি চাহিদা বুঝে চড়া দাম হাঁকছে৷ কলম্বোর বস্তি এলাকার বাসিন্দা হাসান বলেন, ‘‘আমরা এর আগে ১৫ টাকায় সার্জিকাল মাস্ক কিনেছি৷ কিন্তু এখন আর ওই দামে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেউ কেউ এই মাস্কগুলি ৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন৷ আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষই বাধ্য হয়ে ঘরে তৈরি মাস্ক পড়ছেন৷’’

পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার আঘাত অনেকটাই কম৷ তবে এশিয়ায় অক্সফ্যাম এর মুখপাত্র নিপুনা কুমবালাথারা মনে করেন, হাসানের মতো মানুষদের পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেশি করে আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে৷ প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশের সরকারকে৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *