থাইল্যান্ড: উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের নং বুয়া লাম্ফু প্রদেশের ওয়াট ফু হিন বুদ্ধমন্দির। সাধারণ ভাবে আর পাঁচটা বুদ্ধমন্দির বলতে যে হিরণ্ময় নীরবতার মধ্যে ধ্যানমগ্নতার ছবিটা ভেসে ওঠে, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিল না৷ কিন্তু এক হাড়হিম করা ঘটনাই ব্যতিক্রমী হিসেবে সংবাদের শিরোনামে নিয়ে এল এই বুদ্ধমন্দিরকে৷
অপার শান্তির সন্ধানস্থলই রক্তাক্ত হয়ে উঠল আরাধ্যর প্রতি আত্মোৎসর্গে৷ আলোড়ন ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় জানা গিয়েছে, এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পরের জন্মে অনন্ত সৌভাগ্য লাভের আশায় নিজের মাথা কেটে উৎসর্গ করেছেন পরম আরাধ্য গৌতম বুদ্ধকে৷ যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মোক্ষলাভের লক্ষ্যে, সেই থম্মকর্ণ ওয়াংপ্রিচা গত ১১ বছর ধরে এই ওয়াট ফু হিন মন্দিরে নিয়মিত সেবা করেছেন গৌতম বুদ্ধের৷
শাক্যবংশীয় গৌতম বুদ্ধ বিষ্ণুর অবতার কি না, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকলেও, এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে, আজীবন বেদ-বিরোধিতা এবং ধর্মের নামে রক্তপাতের বিরোধী ছিলেন তিনি৷ বৌদ্ধধর্ম জন্মান্তরবাদের কথা বললেও, ইহজন্মের ভালো কাজের সুফল পরজন্মে কুড়োনোর কথা বললেও, জীবন উৎসর্গ করার কথা বলে না৷ তা হলে তাঁর ভক্ত কেন বেছে নিলেন এমন আত্মহননের পথ? জানা গিয়েছে, থম্মকর্ণের ভাইপো বুনচার্ড বুনরোড মন্দিরে এসে কাকার কাটা মাথা দেখতে পান৷ তিনি জানান যে, মুণ্ডহীন দেহের পাশে একটি মার্বেল পাথরের ফলকে নিজের আত্মাহুতির কারণ লিখে গিয়েছিলেন থম্মকর্ণ৷ সেখানেই থম্মকর্ণ জানিয়ে গিয়েছেন, গৌতম বুদ্ধকে প্রসন্ন করার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে এই আত্মোৎসর্গের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পরিকল্পনা সফল করতে নিজে হাতে একটি গিলোটিনও এর জন্য তৈরি করেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত দিনে বুদ্ধমূর্তির সামনে নিজের দেহ থেকে মাথা এমন ভাবে বিচ্ছিন্ন করেন, যাতে তা মূর্তির কোলে গিয়ে পড়ে!
থম্মকর্ণের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে কেউ কি ওয়াকিবহাল ছিলেন? প্রশাসন এব্যাপারে মন্দিরের অন্য সন্ন্যাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে যে, থম্মকর্ণ শুধু মন্দির ছেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে ছেড়ে যাওয়া এমন হবে তার আঁচ পাননি কেউই৷ জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে থম্মকর্ণের দেহ একটি কফিনে ভরে এবং মাথাটি একটি কাচের পাত্রে বসিয়ে শোভাযাত্রা করে অন্তিম সংস্কার সম্পন্ন করা হয়৷ তাঁর এই আত্মত্যাগ অনেকের প্রশংসা কুড়োলেও, অন্য কাউকে এমন পদক্ষেপ না-করার অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন৷