চলছে সার্জারি, অপারেশন টেবিলে ভায়োলিন বাজিয়ে চলেছেন রোগী

টার্নারের ব্রেনের ম্যাপ করে, মাথার খুলি ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলেই তাঁকে ভায়োলিন বাজানো শুরু করতে বলেন ডঃ আকশন। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে অপারেশন টেবিলে শারীরিক, মানসিক চাপ সহ্য করেও একের পর এক টুকরো টুকরো সুর বাজাতে শুরু করেন টার্নার। 

বিশ্বব্যাপী আশ্চর্য, অতিআশ্চর্য ঘটনার ভিড়ে কিছু ঘটনা এমনও ঘটে যায় যা শুধু আমাদের বিস্মিতই করেনা অনুপ্রেরণাও জোগায়। এমনই বিরল থেকে বিরলতম ঘটনার সাক্ষী থাকলো ব্রিটেনের এক হসপিটাল। যখন জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অপারেশন টেবিলেই নিজের একমাত্র শখকে আগলে রাখার চেষ্টা করে গেলেন।

এনডিটিভি-র তথ্য অনুসারে ক্রিটিক্যাল ব্রেন সার্জারি চলছিল  ৫৩ বছরের ডাগমার টার্নারের। শেষ পর্যন্ত কি হবে তা সকলেরই অজানা ছিল। কিন্তু অপারেশনের ভীতি, অপারেশন চলাকালীন শারীরিক অসুবিধা এমনকি অপারেশন শেষে নিজের জীবন ফিরে পাবেন কিনা সেসব চিন্তাভাবনা সবকিছুই তাঁর কাছে নগণ্য হয়ে উঠেছিল এবং একমাত্র দুশ্চিন্তা ছিল যে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের ভায়োলিন বাজানোটা যেন না ভুলে যান। যদি কোনো কারণে স্মূতিশক্তির ওপর প্রভাব পড়ে এবং তিনি ভায়োলিন বাজানোর ক্ষমতা হারান? 

ব্রেন সার্জারি বলে কথা। ডাগমার টার্নারের মাথাযর ডানদিকে মস্তিষ্কের সামনের অংশে একটি টিউমার ধরা পড়ে। এটি মস্তিষ্কের এমন একটি অঞ্চল যা আমাদের মোটর ফাংশন এবং গতিবিধি ঘনিষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই অপারেশন টেবিলেই সার্জারি চলাকালীন তাঁকে ভায়োলিন বাজানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে শুধু রোগীর ইচ্ছেপূরণের জন্যই অপারেশন টেবিলে রোগীর এইধরণের অদ্ভুত আবদারে অনুমতি মিলেছে তা কিন্তু নয়। কারণ পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা মাফিক করেছেন নিউরোসার্জন প্রফেসর কিওয়ার্ড আকশন। যদিও ড্যাগমারের ভায়োলিনের প্রবল শখের কথা মাথায় রেখেই এভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তিনি ও তাঁর সহকারী ডাক্তাররা ধাপে ধাপে প্রথমে ড্যাগমারের ব্রেনের ম্যাপ করেন, এরপর মাথার খুলি ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলেই টার্নারকে ভায়োলিন বাজানো শুরু করতে বলেন আকশন। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই পরিস্থিতিতে শারীরিক, মানসিক চাপ সহ্য করেও একের পর এক গুস্তাভ মাহলার, জর্জ গার্সউইনের জাজ ক্লাসিক “গ্রীষ্মকালীন” এবং স্প্যানিশ গীতিকার ও গায়ক জুলিও ইগলেসিয়াসের গানের  টুকরো টুকরো সুর বাজাতে শুরু করেন টার্নার। 

সার্জনরা তাঁর মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচারের পরে ডঃ আশকান বলেন যে এই প্রথমবার তিনি কোনো রোগীকে এই পরিস্থিতিতে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে দেখলেন । টার্নারের বাম হাতে পুরো ফাংশন ধরে রেখে তাঁর মস্তিষ্কের টিউমার আক্রান্ত ও সন্দেহযুক্ত সমস্ত অংশ সহ ৯০ শতাংশের বেশি টিউমার অপসারণ করতে পেরেছেন অভিজ্ঞ সার্জনরা।

টার্নার, ধরেই নিয়েছিলেন যে অপারেশনের পরে তিনি তার সমস্ত দক্ষতা হারাবেন, তিনি সার্জন এবং ডাক্তারদের  ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং মেনে নিয়েছেন যে তার ধারণা ভুল ছিল।

একটি সংবেদনশীল নোটে, তিনি ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন:

বেহালা আমার আবেগ; আমার ১০ বছর বছর পর থেকে আমি ভাবেন বাজাই। আমার এই ক্ষমতা হারানোর দুশ্চিন্তা  ছিল অত্যন্ত কষ্টকর।

তবে এইধরনের ঘটনাই প্রমাণ করে মানুষের জীবনে শখ কতটা প্রবল হয় এবং সেক্ষেত্রে টার্নার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + 13 =