৬৬,১৬৮ ঘণ্টার পরিশ্রমে প্রাণ পেয়েছে পদ্মা সেতু! গড়েছে রেকর্ড, অবদান রয়েছে ভারত-সহ ২০ দেশের

৬৬,১৬৮ ঘণ্টার পরিশ্রমে প্রাণ পেয়েছে পদ্মা সেতু! গড়েছে রেকর্ড, অবদান রয়েছে ভারত-সহ ২০ দেশের

কলকাতা:  স্বপ্ন দেখার শুরু সেই দু’যুগ আগে৷ সেই স্বপ্ন সত্যি করে পদ্মার উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু৷ এই সেতু জুড়েছে বাংলাদেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে৷ এই সেতু বাংলাদেশের কাছে এখন ঐতিহ্যের প্রতীক৷ 

আরও পড়ুন- যু্দ্ধে সর্বস্ব হারানো ইউক্রেনীয় নাগরিকদের আশ্রয় দিতে বড় ঘোষণা ব্রিটেনের

বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলো জানাচ্ছে, পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ সম্ভব কিনা, সেই পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয় সেই ১৯৯৯ সালে৷ তবে থেকে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বোনা শুরু৷ এর দু’বছর পর ২০০১ সালের জুলাই মাসে মাওয়া প্রান্তে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এর পর পদ্মা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল৷ অবশেষে ২০০৯ সালে ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যামের নেতৃত্বে শুরু হয় সেতুর নয়া নক্সা তৈরির কাজ৷ ২০১০ সালে তা শেষ হয়৷ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন, দেশের অর্থেই বাংলাদেশ সরকারই এই সেতু নির্মাণ করবে৷ ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় সেতু তৈরির কাজ৷ এর পর থেকে ২,৭৫৭ দিন অর্থাৎ ৬৬,১৬৮ ঘণ্টা ধরে ইঞ্জিনিয়র, শ্রমিক এবং অন্যান্য কলাকুশলীদের নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি হয় পদ্মা সেতু৷ 

পদ্মা সেতু

প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর জলের উপরের অংশে রয়েছে প্রায় সওয়া ছয় কিলোমিটার৷ ২২ মিটার চওড়া এই সেতুতে রয়েছে মোট চারটি লেন৷ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯৪টি স্টিলের ফাঁপা থাম৷ সেতুর ধারের পাতগুলি তৈরি করেছে একটি নামী চিনা সংস্থা৷ মোট ৪২টি থামের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতুর প্রতিটি থাম ৫০ হাজার টন ভার বহনে সক্ষম৷ প্রথমে এই প্রকল্পের প্রধান বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়র ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী৷ তাঁর মৃত্যুর পর সেই দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শামীম জাহান বসুনিয়া৷ 

পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের আগ্রহ-কৌতুহলের অন্ত নেই৷ বহু মানুষ এই সেতুর উপর দিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন৷ আরও একটা বিষয় বলে রাখি, অনেকেই হয়তো জানেন না পদ্মা সেতু দিয়ে শুধু যানবানই চলাচল করবে না, এর নীচ দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন৷ অর্থাৎ পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাবে গাড়ি৷ তার ঠিক নীচে দিয়ে চলবে রেল। তবে এখনই রেল পরিষেবা শুরু হচ্ছে না৷ এর জন্য এখনও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। 

আকর্ষণীয় এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিপুল খরচ হলেও এখান থেকে অর্থও উপার্জন হচ্ছে৷ উদ্বোধনের দিনই এই সেতু থেকে টোল ট্যাক্স বাবদ এসেছে ২ কোটি ৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা। তৃতীয় দিনে পদ্মা সেতুর টোল থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ১০০ টাকা। 

উল্লেখ্য বিষয় হল, পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার পর এই সেতু পার করতে প্রথম টোল ট্যাক্স দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর গাড়ি এবং কনভয়ের সমস্ত গাড়ি মিলে মোট ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪০০ টাকা। প্রথম বছরই এই সেতু থেকে ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ সরকার৷ 

পদ্মা সেতু

এই সেতু পার করতে মোটরসাইকেলকে টোল দিতে হয় ১০০ টাকা, গাড়ি বা জিপের ক্ষেত্রে ৭৫০ টাকা, পিক-আপ ভ্যানের ক্ষেত্রে ১২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে ১৩০০ টাকা, অন্যান্য বাসের ক্ষেত্রে আয়তন অনুযায়ী খরচ ১,৪০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে দিনে প্রায় ৪১ হাজার যান চলাচল করবে। এই সেতু নির্মাণে ভারত সহ মোট ২০টি দেশের অবদান রয়েছে৷ 

পদ্মা সেতুর উপর বসানো হয়েছে মোট ৪১৫টি ল্যাম্প পোস্ট৷ একটি পোস্ট থেকে অপরটির দূরত্ব প্রায় ৩৮ মিটার। প্রতিটি পোস্টের ওজন ২৭৫ কেজি। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঘণ্টায় ১৮০-২০০ কিমি বেগে ঝড় বইলেও এই ল্যাম্প পোস্টগুলির কোনও ক্ষতি হবে না। এমনকী নদী পথে বড় কোনও জাহাজ এসে ধাক্কা মারলে বা রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলেও এই সেতুকে টলানো যাবে না৷ ইতিমধ্যেই একাধিক বিশ্বরেকর্ড গড়ে দুনিয়ার নজর কেড়েছে পদ্মা সেতু। যার মধ্যে অন্যতম বিশ্বের দীর্ঘতম স্টিলের থামের ব্যবহার৷