ঢাকা: আমি চিত্রাঙ্গদা…৷ ঋতুপর্ণ ঘোষ সেই কবে চিত্রাঙ্গদার মতো সাহসী সিনেমা বানিয়ে, রূপান্তরকামীদের গল্প বলেছিলেন৷ একবিংশ শতকেও তাঁর চিত্রাঙ্গদাদের লড়াই জারি রয়েছে নিজেদের সত্ত্বা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনই এমন এক রূপান্তরকামী পেলেন প্রথম নারীত্বের স্বীকৃতি৷ তিনি বাংলাদেশের এক টেলিভিশনের প্রথম রূপান্তরকামী নিউজ অ্যাঙ্কার৷ নাম তানসুভা আনন শিশির৷
বুলেটিন শেষ৷ সহকর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা কানে পৌঁছচ্ছিল না তানসুভার। উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপছিলেন৷ স্টুডিওর আলো নিভতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেই কান্না আনন্দের, সেই কান্না অনেক হেনস্থা আর কটূক্তির, সেই কান্না সব লড়াই পেরিয়ে নিজের স্বপ্নকে সত্যি হতে দেখার৷ সেই চোখের জলে ছিল আত্মবিশ্বাস৷ অনেক ধাক্কা খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলছিল ওই চোখের জল।
সেই ছেলেবেলা থেকেই সমাজের সঙ্গে লড়তে হয়েছে তানসুভাকে। তখন তাঁর নাম ছিল কমল হুসেন শিশির৷ তারপর ক্রমশ নিজের সত্ত্বাকে চেনা, নিজেকে বদলে ফেলা শুরু। অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তানসুভা আজ ক্যামেরার সামনে। রূপান্তরকামীদের নিয়ে এই সমাজের বদ্ধমূল ধারণাগুলিকে একদিন বদলে ফেলার স্বপ্ন দেখেন তিনি। নিজের মনের মণিকোঠায় লালিত সেই স্বপ্নপূরণের পথেই তাঁর নতুন পদক্ষেপ সংবাদপাঠ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশের প্রথম রূপান্তরকামী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ করলেন তানসুভা। নিজের দেশের মাটিতে এক ইতিহাস গড়লেন ২৯ বছর বয়সি এই রূপান্তরকামী।
তাঁর এই পথ চলা একার নয়৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অন্তত ১১,৫০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। যদিও এলজিবিটি সমানাধিকারের প্রবক্তাদের মতে, ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশে সংখ্যাটা প্রায় এক লক্ষ। দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘বৈশাখী টিভি’ নামে বাংলাদেশের একটি টেলিভিশেনের পর্দায় দেখা গেল তানসুভাকে। পেশায় মডেল ও অভিনেত্রী তানসুভাকে সংবাদ পাঠে নিয়োগের পাশাপাশি আর এক রূপান্তরকামী নুসরত মৌকেও চ্যানেলের একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে বলেও জানা গিয়েছে৷ চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, দেশের কিছু অংশের মানুষের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিতে তারা বদ্ধপরিকর ছিলেন।