“গণহত্যার মামলা”! হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি?

দিল্লি: গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি?এটা কী সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা?ভারত কী বাধ্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে? ‘গণহত্যা’র বিচার অধরা, এবার এটাকে ইস্যু…

hasina cry

দিল্লি: গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি?এটা কী সিদ্ধান্ত নিল ঢাকা?ভারত কী বাধ্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে?

‘গণহত্যা’র বিচার অধরা, এবার এটাকে ইস্যু করেই শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাহলে কি এভাবেই শেখ হাসিনাকে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ? এখনো পর্যন্ত গোটা প্রসেসটা কতদূর এগিয়েছে?

বাংলাদেশে ‘জুলাই গণহত্যা’-র পর পেরিয়ে গেছে এক মাস। এ বার সেই রাষ্ট্রীয় হত্যার বিচার চেয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরাতে
নয়াদিল্লির সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি করার কথা ভাবছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন সরকার।
হ্যাঁ, জল গড়িয়েছে অনেক দূর। শীঘ্রই আইসিটির কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনা-সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানাবে ঢাকা, একথা বলেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত প্রধান আইনজীবী মহম্মদ তাজুল ইসলাম। তারপর হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হবে এবং সত্যতা যাচাইয়ের পর সেই প্রমাণগুলোকে একত্রিত করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সামনে পেশ করা হবে। অতএব পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে শেখ হাসিনার সামনে যে বড় বিপদ এটা নতুন করে বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতের কাছে দাবি করলেই শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত কি আদৌ বাধ্য থাকবে?

ভারত বন্ধু শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছাড়েন আগস্ট মাসে। বলা ভালো ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর অন্য দেশে যেতে চেয়েও বিশেষ সুবিধা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভারতেই আশ্রয় নেন। আর এবার যখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তখন ভারতের উপরেও একটা চাপ বাড়ছে বৈকি। কারণ দুটো এক শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে ভারতেই রয়েছেন, দুই ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক কতদিনের সেটা দুটো দেশ খুব ভালো করেই জানে। এদিকে বাংলাদেশে কয়েক দিন ধরেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে, একাধিক হত্যা মামলায় বিচার করার কথা বেশ জোর দিয়ে বলা হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে তাদের কাছে একটাই উপায় প্রত্যর্পণ চুক্তি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি হয় ২০১৩ সালে, যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন।তবে এই চুক্তির অধীনে শেখ হাসিনার মত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর প্রত্যর্পণ সম্ভব কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। শুধুমাত্র আইনের ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি বিবেচিত হলে ফলাফল যেমন অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে, তেমনি আইনের বাইরে রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা মিশে গেলে বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ২০১৩ সালের চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইলেই কি ভারত তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য? নাকি ভারত সরকার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারে?

ভারতেরই আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, ঢাকা যেমন ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে প্রত্যর্পণ চুক্তি মেনে তেমনি নয়াদিল্লি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। রিফিউজ করতে পারেন। যদি তারা মনে করে তাঁকে যে অপরাধের জন্য ফেরত চাওয়া হচ্ছে সেগুলো রাজনৈতিক‌। কিন্তু এটাতো ঠিক, হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়ার কথা-বার্তা হচ্ছে মারাত্মক সব অভিযোগে বিচারের জন্য, যেমন ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। এধরনের অভিযোগ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে রাজনৈতিক অভিযোগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আইন বলছে, অপহরণ, বেআইনিভাবে আটক, সন্ত্রাস, হত্যা, ষড়যন্ত্রের মতো অপরাধ রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। সেক্ষেত্রে ভারতের কাছে নেক্সট কি প্ল্যান রয়েছে সেটা ভাববার বিষয়। এবং দিল্লির কাছে নিরাপদ আশ্রয়ে যে আছেন শেখ হাসিনা, সেটা তো সাময়িক। ৫ ই আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। তবে তাঁর ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদে ভারত সরকার কী করতে চায়, সেটা কিন্তু পরিষ্কার নয়। তাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যতই অভিযোগের পাহাড় জমছে, ততই ভারত শেখ হাসিনাকে নিয়ে ঠিক কোন প্ল্যানে এগোবে সেই বিষয়টা নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে। একমাত্র সময় ই বলবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে ঠিক কি অপেক্ষা করছে।