বাংলাদেশের সবথেকে বড় লস’টা কী? ঘুরে দাঁড়ানোই বিপদ!

দিল্লি : বাংলাদেশ আদৌ কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কী? শেখ হাসিনার সরে যাওয়াই কী বড় লস? এখন না, ঠিক সময়ে হারে হারে বুঝবে দেশটা।…

Future of Bangladesh

দিল্লি : বাংলাদেশ আদৌ কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কী? শেখ হাসিনার সরে যাওয়াই কী বড় লস?
এখন না, ঠিক সময়ে হারে হারে বুঝবে দেশটা। ওপার বাংলার সবথেকে বড় ক্ষতিটা কী হলো, জানেন?

হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা এবং হাসিনার দেশছাড়া হওয়া। কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে যা হলো, তাতে নতুন বাংলাদেশ গঠন হলেও তা কতটা স্বস্তির হবে সেটা নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠছে। তার সবচেয়ে বড় কারণ, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতি আরও বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়ালো। এতে অনেকেরই মনে হবে, তাহলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যে পরিস্থিতি চলেছে বাংলাদেশে তাতে যে মোট অর্থনীতির মিনিমাম ৫০ হাজার কোটি থেকে ম্যাক্সিমাম ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতো এতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এটাই তাহলে সেই সাংঘাতিক লস!

কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আর্থিক ক্ষতিটাকে প্রাথমিক ক্ষতি ধরে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির জন্য তৈরি হতে হবে। কারণ, এই পরিমাণ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বাংলাদেশের কতদিন সময় লাগবে সেটা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অবকাঠামোগত যেসব ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে ৬ মাস থেকে ১ বছর, আর ব্যবসায়িক সেক্টরে যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগবে না। মোদ্দা কথা টাকার অঙ্কে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা ধাপে ধাপে বাংলাদেশ হয়তো পুষিয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকা, এই সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভবিষ্যতে, তা সামাল দেওয়া যে কঠিন হবে এটা দিনের আলোর যতো পরিষ্কার।

এবার অনেকেরই মনে হতে পারে যে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় আসে। তাহলে আগামী দিনে সেই সেক্টর বাংলাদেশকে সুদিন দেখাতে পারে কি? আসল ফ্যাক্ট হলো, অনেকেই বলছেন বিদেশি ক্রেতারা অলরেডি রফতানি বাজার বদলে ফেলেছেন। সেইসব ক্রেতা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম চলে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে। আর এর জন্য প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি এখনই বাণিজ্য, পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হয়ে স্টেপ না নেয়, তাহলে আপতদৃষ্টিতে পোশাক খাতকে যতটা নড়বড়ে দেখাচ্ছে, আগামীতে তার চেয়েও বেশি বিপদে পড়বে। শুধু পোশাক খাত নয়, বিদেশি নানা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ বুঝতে পারছে আপাতত কেউই বাংলাদেশকে নিয়ে ইতিবাচক বা পজিটিভ কিছু ভাবছেন না। সেক্ষেত্রে এতদিন ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিজের যে ভাবমূর্তি বা ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেটা আবারো নতুন করে তৈরি করতে কতটা সময় লাগবে বা কি কি পদক্ষেপ করা যাবে, আদেও সেটা পুনরুদ্ধার করা যাবে কিনা সেটাই এখন বাংলাদেশের জন্য চাপের বিষয়। চাপ ইউনূসের জন্যেও। তিনি এমন একটা সময় দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন যখন তার সামনে অনেক বড় বড় কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

একই সঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্টে। প্রাইভেট খাতের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশকে ভুগতে হবে।
যা ঘটেছে বাংলাদেশে, যারা সংঘাতের ওই রূপ দেখেছে তারা আর যাই হোক বাংলাদেশে ইনভেস্ট করার আগে ১০০ বার ভাববে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামোর পেছনে সরকার যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার বিপরীতে প্রাইভেট বিনিয়োগ না আসলে দেশীয় অর্থনীতি বিপদে পড়বে।

এসব হিসাব-নিকাশের বাইরে আরেকটা বিষয় থেকেই যাচ্ছে। একটা জিনিস তো মানতেই হবে, সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় অংশের জনগণের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ওই দূরত্বের জন্য দেশের মানুষকে রাষ্ট্রের কল্যাণে ইনভল্ভ করা সরকারের জন্য কঠিন হবে। ফলে, যেভাবেই হোক সরাসরি সরকার বা এনজিওর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে এই দূরত্ব ঘোচাতে না পারলে বিপদ আরও বাড়বে।
অতএব, শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি না। সবদিক থেকে লস করেছে বাংলাদেশ। একসময় উন্নয়নের ধ্বজা ওড়ানো ওপার বাংলার বুকে এখন অর্থনীতির পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে কিভাবে, কিভাবেই বা ঘটবে উন্নয়ন? আদৌ কি জিনিসপত্রের দাম কমার বালাই হবে? বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্ট এর সম্ভাবনাগুলো নষ্ট হলে অর্থনীতির ভেদ আদৌ কি স্ট্রং হবে? আদৌ কি বর্তমান সরকারের ওপর মানুষের ভরসা বাড়বে? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অধরা।