বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দণ্ডমুণ্ডের কর্তা! ডিটো পাকিস্তান হতে বসল নাকি?

দিল্লি:বাংলাদেশ হুবহু পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে না তো? সেনাবাহিনীই সব দণ্ডমুণ্ডের কর্তা?বড় ভুল করল না তো ইউনূস সরকার?প্রশ্নগুলো এই মুহূর্তে খুব প্রাসঙ্গিক। কারণ, বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের…

m yunus

দিল্লি:বাংলাদেশ হুবহু পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে না তো? সেনাবাহিনীই সব দণ্ডমুণ্ডের কর্তা?বড় ভুল করল না তো ইউনূস সরকার?প্রশ্নগুলো এই মুহূর্তে খুব প্রাসঙ্গিক। কারণ, বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের ক্ষমতা দিল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার! যা থেকে অনেকেরই প্রশ্ন, তলায় তলায় কট্টরপন্থীদের মতো সেনাও কি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে? আসলে, প্রশ্নটা খুঁচিয়ে দিলেন মহম্মদ ইউনূস নিজেই।

কারণ, পরপর ঘটনাক্রম সাজালে যা দাঁড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ। বাংলাদেশ ছাড়া। সেনাশাসন। সেনাপ্রধানের শান্তি ফেরানোর বার্তা। তারপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মহম্মদ ইউনূস দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের সেনাকে আর কিন্তু সে দেশের সিভিলিয়ান লাইফে সেভাবে দেখা যায়নি। অথচ, এখন ইউনুস সরকার। সেই সেনার উপরেই এত ভরসা করছে। বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের সমান ক্ষমতা দিয়েছেন তিনি। তাহলে, সবটাই কি আসলে আই ওয়াশ ছিল? উত্তরটা অনেকেরই নিজের নিজের মতো করে খুঁজে নিচ্ছেন বুঝে নিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের সেনা ঠিক কোন কোন দায়িত্ব পালন করবে? বা তাঁদের এক্তিয়ার কতদূর? এবার সেটাও জেনে রাখা জরুরী।

দেখুন প্রিয় দর্শক, সীমান্তে সেনা, আধা-সেনা থাকে। উপদ্রুত অঞ্চল হলে নাগরিক জীবনেও কখনও কখনও সেনার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ভারতেও তাই। দরকারে সেনা নিশ্চয়ই কাউকে ধরতেও পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেনা কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারে না। গ্রেফতার করতে পারে না। সেনা কাউকে আটক করলে নিয়ম হল ওই ব্যক্তিকে তারা পুলিশের হাতে তুলে দেবে। পুলিশ এফআইআর করবে, কোর্টে তুলবে। তারপর যেমন বিচার হয় হবে। অথচ, গণতন্ত্র ফেরানোর নামে, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার নামে, নতুন বাংলাদেশের মহিমা হিসেবে এটাও সই। হ্যাঁ, এটা মানতেই হচ্ছে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কাজকর্মে কিন্তু উলটপুরাণ। যেমন, পুলিশ কী করবে এবং করবে না তা আমাদের দেশে ফৌজদারি কার্যবিধি বা সিআরপিসি-তে লেখা আছে। যা এখন বদলে হয়েছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা। তেমন, ব্রিটিশদের তৈরি করে যাওয়া সিআরপিসি বাংলাদেশে এখনও আছে। সেখানেই পুলিশকে আটক, গ্রেফতার ও প্রয়োজনে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে বলাই বাহুল্য, সেই ক্ষমতা এবার বাংলাদেশের সেনার হাতেও চলে এল। অলরেডি, বাংলাদেশের তদারকি সরকার নোটিফিকেশন করে জানিয়েছে আগামী দু-মাস পুলিশের সমান ক্ষমতা ভোগ করবে সেনা। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন এতে শাসকের থেকে সেনার পাওয়ার বেশি হয়ে যাবে না তো? ঠিক একটা সময় পাকিস্তানে যেমনটা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে তিন দশকেরও বেশি সময় সরাসরি দেশের শাসন চালিয়েছে সেনাবাহিনী। যখন বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখনও আড়াল থেকে কেন্দ্রের বেশিরভাগটাই কন্ট্রোল করেছে পাক সেনা। এটা ফ্যাক্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সব দন্ডমন্ডের কর্তা। তাহলে কি এবার সেই একই ছবি বাংলাদেশে? যখন খুশি দেশের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া, বিভিন্ন কারণে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরানো, এবার কি এগুলো বাংলাদেশেও দেখতে হবে? জেনারেলই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, এমার্জেন্সিতে জনগণের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সেনাবাহিনীর কাজ। কিন্তু পাকিস্তান এর ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম। দেশের নিরাপত্তা তো বটেই রাজনীতির উপরেও টেকনো নজর রাখা ওখানকার সেনাবাহিনীর একটা কাজ বলা যায়। তাইতো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায় কি ক্ষমতায় থাকবে আর কে থাকবে না ওই দেশে সেটাও ঠিক করে সেনাবাহিনী। ভয়টা এখানেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেই পাওয়ার টাই সেনার হাতে চলে যাবে না তো?

ভাবতেই তো কেমন লাগছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশে এখন পুলিশের সঙ্গে সেনাও রাস্তায় আছে। তবে, তারা আছে পিছনে। দরকারে পুলিশকে সাহায্যকারীর ভূমিকায়। এইবার ভাবুন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সেনা সাধারণ মানুষকে কলার ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করছে। কিংবা গুলি চালাচ্ছে। মানে পুলিশ গুলি চালালেও তাতে লাগাম থাকে। মানুষের বিক্ষোভে সেনা গুলি চালালে তাতে লাগাম থাকবে কী? সবমিলিয়ে সিআরপিসি অনুযায়ী পুলিশের হাতে থাকা সতেরোটা ক্ষমতা সেনার হাতে তুলে দেওয়া! আগামী দিনে এটা ইউনুস সরকারের জন্য ভারী পড়বেনা তো?

কারণ এবার বাংলাদেশের সেনা আটক, গ্রেফতার, গুলি তো বটেই। এ ছাড়াও, সেনা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারবে। ডাকে পাঠানো সাধারণ মানুষের যে কোনও চিঠিপত্র খুলে দেখতে পারবে। যে কারোর দেহ তল্লাশি করতে পারবে। চাইলে যে কোনও ব্যক্তিকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করতে পারবে। জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এতদিন যা পারত না, এবার এক এক করে সবই পারবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যাঁরা কমিশন্ড অফিসার আছেন, তাঁদের হাতে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নির্দেশে সেনার সংশ্লিষ্ট ইউনিটের জওয়ানরা সিভিলিয়ান লাইফে ঢুকে ধরপাকড়ও চালাতে পারবেন।

এবার, অনেকেই ভাবতে পারেন নৈরাজ্যের পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনার জন্য সেনাবাহিনীকে পুলিশের সমান ক্ষমতা দেওয়া হলো। তবে, ওই দেশের সাধারণ মানুষের বড় অংশ কিন্তু মোটেই এমনটা ভাবছেন না। সূত্রের খবর, রীতিমতো প্রমাদ গুণছেন আওয়ামি লীগের নেতাকর্মীরা। কারণ ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফেরার কিছুদিন পর অপারেশন ক্লিন হান্ট শুরু করেন। সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। দুর্নীতি এবং রাহাজানি দমনের নামে শুরু করা অভিযানে আওয়ামি লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে পাঠায় খালেদা জিয়ার সরকার। ফলে, পুলিশের পোশাক সেনার গায়ে চাপলে পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে বড় চিন্তা থাকছেই।

একইসঙ্গে এই চিন্তাটাও থাকছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যেমন এরকম রাজনীতিকদের পছন্দ করেন যারা সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করবে না। সেনাবাহিনীর তাদেরকে হাতের পুতুল করে রাখতে পারবে। আর এই জন্য গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তানের কোন প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন না। ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। তাহলে এবং সেই ট্রেন্ডেই গা ভাসাবে না তো বাংলাদেশ?