সুনীতাদের ফেরা হচ্ছেনা! স্পেস স্টেশনে কোন বিপদ আসন্ন?

দিল্লি: বড় খবর! মহাকাশ থেকে ফিরছেন না সুনীতা? কেন এভাবে খালি ফিরে আসছে মহাকাশযান স্টারলাইনার? কেন পৃথিবীতে আর ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না নভোশ্চরদের? মহাকাশে থাকলে…

Picsart 24 08 30 18 26 33 780

দিল্লি: বড় খবর! মহাকাশ থেকে ফিরছেন না সুনীতা? কেন এভাবে খালি ফিরে আসছে মহাকাশযান স্টারলাইনার? কেন পৃথিবীতে আর ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না নভোশ্চরদের? মহাকাশে থাকলে শরীরের ভেতর ঘটতে থাকে ভয়ঙ্কর সব পরিবর্তন।
প্রতিবেদনটা পড়লে বুঝতে পারবেন সুনীতারা জীবন বাঁচাতে মহাকাশের বুকে ঠিক কোন লড়াইটা লড়ছেন।

মহাকাশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্দী সুনীতা এবং বুচ। আর এটাই সোজা কাজ নয়। কারণ মহাকাশ আর পৃথিবীতে টিকে থাকার মধ্যে বিশাল একটা ফারাক।
সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হল মহাকালের বুকে সুনীতাদের সঙ্গে বড়সড় কোনো বিপদ ঘটে যাবে না তো? বাড়ছে আশঙ্কা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। প্রথমত, আড়াই মাস ধরে মহাকাশে আটকে থাকায় দুজনেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
মহাকাশে কি হয়, শরীরের ওপর অভিকর্ষের নিরবচ্ছিন্ন টান না থাকায় মানবদেহের পেশি আর হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত কমতে থাকে। তেমনটাই ঘটছে এই দুজনের ক্ষেত্রেও।
এমনকি পেশির ঘনত্বও কমতে পারে। চিন্তার বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশে থাকলে দ্রুত হারে কমতে থাকে লাল রক্তকণিকার পরিমাণ।
এরকমটা ঘটলে সুনীতারা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। মোদ্দা কথা এটা পরিষ্কার, দিনে দিনে রিস্ক বাড়ছে। আসলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে সুনীতাদের নিয়েই ফিরবে তাঁদের মহাকাশযান বোয়িং স্টারলাইনার। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয় নাসা। সেপ্টেম্বরে তাঁদেরকে না নিয়েই পৃথিবীতে ফিরে আসবে মহাকাশযানটা।
এখন প্রশ্ন হলো কেন? কেন চেয়েও পৃথিবীতে আসতে পারছেন না সুনিতা আর বুচ?
আসলে বুঝতে হবে, মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মহাকাশচারীদের মহাকাশে রেখে দেওয়াই সেফ বলে মনে করা হয়। আর সেখানে, বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযান থেকে হিলিয়াম গ্যাস লিক হচ্ছিল। ওই অবস্থায় পৃথিবীতে ফেরার চেষ্টা কতটা ভয়ানক বা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে? আন্দাজ আছে? পরিস্থিতি কিন্তু এমনও হতে পারতো যে ওই মহাকাশযানে ফিরতে গিয়ে সুনিতাদের লাইফ রিস্ক হতে পারতো।
সেক্ষেত্রে “নাসা যে তাড়াহুড়ো করেনি, এতে আমি খুশি। স্বস্তি পেয়েছি। আমার মেয়ে বা অন্য কেউ দুর্ঘটনায় পড়ুন চাই না। পরে ক্ষমা চাইতে হয়, এমন কিছু না করে, নিরাপত্তায় জোর দেওয়া বেশি জরুরি” বলছেন সুনীতার মা।

হ্যাঁ, যখন ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযানে চাপিয়ে সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠানো থেকে তাঁদের পৃথিবীতে ফেরানোয় ঢিলেমির অভিযোগে বার বার বিদ্ধ হচ্ছে NASA, তখন সুনীতার পরিবার কিন্তু আস্থা ভরসা হারাচ্ছে না নাসার উপর থেকে।

কিন্তু আজ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা হঠাৎ করে হল কিভাবে? জানা যাচ্ছে, মহাকাশে পৌঁছানোর পর মহাকাশ স্টেশনে নিজেদের কাজ করছিলেন সুনীতারা।কিন্তু আচমকাই একটা অ্যাক্সিডেন্টে পুরো পরিস্থিতি ঘুরে গেল। কয়েক দিন আগে রাশিয়ার একটি কৃত্রিম উপগ্রহ বিস্ফোরণ হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কাছে। উপগ্রহের শয়ে শয়ে ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশ স্টেশনের আশেপাশে।
তাতে সুনীতাদের কোনও ভয় না থাকলেও তাঁরা স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে ‘মিশন’ এর কাজ করতে পারছেন না। এই ধরনের ‘মিশনে’ মহাকাশচারীদের অনেক সময়েই মহাকাশ স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে কোনও যন্ত্রাংশ ঠিক করা এবং নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরিকল্পনা থাকে। এই ধরনের অভিযানকে বলা হয় ‘স্পেস ওয়াক’। দুর্ঘটনাটা যে দিন ঘটেছে, সে দিন সুনীতাদেরও ‘স্পেস ওয়াক’ করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার পরে ঝুঁকি এড়াতে তড়িঘড়ি মহাকাশ স্টেশনে আশ্রয় নিতে হয় তাঁদের। তার পর থেকে আর ওই ধরনের কোনও অভিযানেই বেরোতে পারেননি তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, সুনীতাদের ফেরা নিয়েও তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। তাই ফিরতে না পেরে আপাতত আগামী ছ’মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রেই কাজ করবেন সুনীতা এবং বুচ।

না এটুকুই নয়, আশার আলোও দেখিয়েছে নাসা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে আরও একটা মহাকাশযান পাঠানো হবে নাসার তরফে।
ইলন মাস্কের স্পেস এক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে করে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে প্ল্যান‌ রয়েছে। তাই সেই অপেক্ষাতেই রাত দিন কাটছে সুনিতার মায়ের। চাইছেন নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসুক সুনীতা।

এদিকে বোয়িং স্টারলাইনার যে খালি ফিরছে তাতে যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে সংস্থার। অন্তত সাড়ে ১২ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখোমুখি বোয়িং। যদিও সেটা বড় কথা নয়। বরং, সুনীতা এবং বুচের নিরাপদে পৃথিবীর বুকে ফেরাটাই বড় ফ্যাক্টর।