ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি

ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি

করাচি:  মাস খানেকের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। গত মাসের গোড়ার দিকে শতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন ধ্বংস করেছিল পাকিস্তান। এক মাস কাটতে না কাটতে আবারও একই ঘটনা ঘটল। ইসলামিক না হওয়ায় একটি বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করা হল সেদেশে। খাইবার পাখতুনখোয়ারের মর্দান জেলার তখতবাহী অঞ্চলে একটি প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তি পাওয়া যায়। প্রাচীন এই মূর্তি উদ্ধারের পরই স্থানীয় নির্মাণকর্মীরা তা ভেঙে ফেলে। তাদের বক্তব্য মূর্তিটি 'ইসলামিক নয়'। অতএব এটি সংরক্ষণ করা হবে না।

ফের ২০০১ সালে বামিয়ানের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল পাকিস্তানে। আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে বামিয়ান উপত্যকায় শতাব্দী প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করেছিল তালিবান। এবার সেই একই ঘটনা ঘটল তখতবাহী অঞ্চলে। এলাকায় বাড়ি তৈরির জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ চলছিল। তখনই শ্রমিকরা প্রাচীন এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। এই এলাকাটি একসময় গান্ধার সভ্যতার অংশ ছিল। যে মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল, সেটিও শতাব্দী প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী। প্রাথমিকভাবে অনুমান, মূর্তিটি ১৮০০ বছরের পুরনো। আবিষ্কার করার পর স্থানীয়রা এ ব্যাপারে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে কোনও খবর দেয়নি। ইসলামের অংশ না হওয়ায় এলাকার মৌলবীর কথামতো তৎক্ষণাৎ সেটি ভেঙে দেয় শ্রমিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ঘটনার ভিডিও। তারপর থেকে অনেকেই নেটদুনিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘরের পরিচালক আবদুল সামাদ বলেন, “আমরা এলাকাটি চিহ্নিত করেছি। শীঘ্রই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হবে।” পাকিস্তানি গণমাধ্যম জানিয়েছে যে মূর্তি ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

খাইবার পাখতুনখোয়ারের পুরনো নাম গান্ধারা। অঞ্চলটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধার জায়গা। ২০১৭ সালে, হরিপুত জেলার ভামালার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে দুটি দুর্লভ এবং প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেটি ছিল এলাকায় পাওয়া সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। সেখানে বুদ্ধের মৃত্যুর দৃশ্যের খোদাই করা রয়েছে। মূর্তিটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মূর্তিগুলির একটি। আমেরিকান পরীক্ষাগারে এর বয়সও যাচাই করা হয়। তখন জানা যায় এটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর চেয়েও পুরনো। পাকিস্তানের পেশোয়ার জাদুঘরটি গৌতম বুদ্ধের স্থাপত্য সংগ্রহ ও প্রদর্শনের জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। বিশ্বের মধ্যে এখানেই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত সংগ্রহ রয়েছে।