আজ বিকেল: প্রকৃত সঙ্গী বা সঙ্গিনী ছাড়া জীবন যে থমকে যায় তা আরও একবার প্রমাণিত হল। কথা হচ্ছে বলিভিয়ার সেহুয়েনকাস প্রজাতির ব্যাং রোমিওকে নিয়ে। রোমিও-র প্রজাতির ব্যাং এখনও গোটা পৃথিবীতে প্রায় নেই বললেই চলে।বছর দশেক আগে বলিভিয়ার মেঘ অরণ্য থেকে প্রায় অসুস্থ অবস্থায় রোমিওকে উদ্ধার করেছিলেন জীব বিজ্ঞানীরা।সেই সময় রোমিওর স্বজাতি ব্যাঙেদের ভাইরাস জনিত রোগে মৃত্যু হয়েছে। প্রথমেই রোমিও-কে উদ্ধার করে সংরক্ষণাগারে নিয়ে আসা হয়।
রোমিও সুস্থ হলে জীববিজ্ঞানীরা এই বিরল প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে রোমিও-র জুড়িদার খোঁজা শুরু করেন। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই জানা যায়, সেহুয়েনকাস প্রজাতির আর কোনও ব্যাং-ই পৃথিবীতে বেঁচে বর্তে নেই। তখন রোমিও বাঁচিয়ে রাখাই মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
এরমধ্যে কবে যেন দশটি বছরও কেটে গিয়েছে। এদিকে কালে কালে বৃদ্ধাবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে রোমিও। এখনই যদি তার জন্য সঙ্গিনী না পাওয়া যায় তাহলে অচিরেই পৃথিবী থেকে বিরল প্রজাতির এক ব্যাঙের বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু বহু খুঁজেও রোমিও জুড়িদার মেলানো যায়নি,হতাশ বিজ্ঞানীরা ২০১৮-র গোড়ার দিকে বলিভিয়ার ওই মেঘ অরণ্যেই ফের সেহুয়েনকাস প্রজাতির ব্যাঙের খোঁজ শুরু করেন। এরমধ্যে বিশ্বের একমাত্র একাকি ব্যাঙের জন্য টুইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে, সেখানে রোমিওর জন্য সঙ্গিনী খোঁজার অর্থও ২৫ হাজার ডলার উঠেছে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে। টাকা হাতে আসার পর জীব বিজ্ঞানীরা ফের অভিযান শুরু করেন মেঘ অরণ্যের সমু্দ্রে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি বেশ কয়েকবার আশার আলো ফুটলেও নিরাশা ফিরে আসে। একবার একটি ব্যাঙ উদ্ধার হলে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, যাক পাওয়া গেল।
কিন্তু বাস্তবে দেখা হল বিরল প্রজাতির হলেও সেটি সেহুয়েনকাস নয়।রণে ভঙ্গ দেওয়ার ইচ্ছে প্রবল হলেও ফের একবার চেষ্টা করতে তাঁরা দ্বিধা বোধ করেননি। এরপর দুটি ব্যাং উদ্ধার হলে দেখা যায় দুটিই সেহুয়েনকাস। তবে তীরে এসে তরী ডোবে, কেননা একটি পুরুষ ও অন্যটি মহিলা হলেও ছোট। তার প্রজনন ক্ষমতা তৈরিই হয়নি। ঠিক ছিল এই মরশুমে আর অভিযান হবে না, তবে দুই সেহুয়েনকাস উদ্ধারের পর বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে সামান্য অদলবদল ঘটান। ঠিক করেন, একবার শেষ চেষ্টা করবেন, সাফল্যও যেন সেই চেষ্টার ভরসায় বসেছিল তাই জুলিয়েটকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয়নি। জুলিয়েট সমেত বিজ্ঞানীরা চলে আসেন সংরক্ষণাগারে। দুজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে, খুব শিগগির জুলিয়েটের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যাবে রোমিওর, তারপর নতুন প্রজন্ম আসার পালা। নতুন ব্যাঙেদের ঠাঁই কিন্তু মেঘ অরণ্যেই হবে। সেখান থেকেই সেহুয়েনকাস প্রজাতির বংশ বিস্তার ঘটাবে তারা।