কলকাতা: আফগানিস্তানে শুরু হয়েছে তালিবান রাজত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। দু’দশক পর ক্ষমতায় ফিরেই মহিলাদের অধিকার দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে তালিবান। কিন্তু, প্রগতিশীল নারীদের প্রতি কতটা সহৃদয় তালিবানরা? তার একাধিক উদাহরণ আগেই দেখেছে বিশ্ব।
সেই কারনেই, তালিবান কাবুল দখলের পর থেকেই ২০ বছরের আগের তালিবানি শাসনের কথা মনে করে আঁতকে উঠছেন সকলে। যদিও প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেই নারীর অধিকার নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে তালিবান। তালিবান মুখপাত্র যাবিউল্লাহ মুজাহিদের কথায়, তালিবান শাসনে কাজ করার অধিকার দেওয়া হবে মহিলাদের। ইসলামিক আইন মেনে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারবেন মহিলারা। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন মহিলারা। কিন্তু শরিয়তি আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই হবে না।
তালিবান মুখপাত্রের আরও দাবি, আজ থেকে ২০ বছর আগে পৃথিবীটা যেমন ছিল, আজ আর তেমন নেই। অনেক কিছু বদল হয়েছে। তাই, আপাতত আইনটি তৈরি হোক, তারপর আলোচনা করা যাবে। তবে এর আগেও, প্রশাসন ও সরকারে তালিবান মহিলাদের উপস্থিতি চায় বলে জানিয়েছিলেন তালিবানের সাংস্কৃতিক শাখার প্রধান। তালিবানিদের তরফে মহিলা সুরক্ষা, অধিকারের বিষয়ে যত আশ্বাসই দেওয়া হোক না কেন ২০ বছরের আগের তালিবানি শাসন যাঁরা দেখেছেন, সেই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা।। তারই প্রমাণ মিলল আফগানিস্তানেরা মহিলা গভর্নরকে বন্দী বানানোর ঘটনায়।
সূত্রের খবর, আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গভর্নরদের একজন সালিমা মাজারিকে ইতিমধ্যেই বন্দি বানিয়েছে এই জঙ্গি সংগঠন। বলখা প্রদেশের ছাহার কিন্ট এলাকা তালিবানদের দখলমুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন সালিমা। সেজন্য যখন গোটা আফগানিস্তান জুড়ে হানাদারি চালাচ্ছিল জঙ্গি সংগঠন, তখন নিজের এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধে নামতে হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছিলেন সালিমা মাজারি। কিন্তু, নির্ভীক এই মহিলাকেও বন্দি বানিয়েছে তালিবানরা। অর্থাৎ, মুখে নারীর অধিকারের বুলি যতই আওড়াক না কেন প্রগতিশীল নারীদের প্রতি আজও কট্টর মনোভাব তালিবানের।
যদিও মহিলা রাজনীতিকের বিষয়ে তালিবানের মনোভাব কেমন? তার উত্তর মিলেছে নেটমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও থেকেই। আফগান মহিলারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, প্রশ্ন শুনেই হাসিতে ফেটে পড়েন তালিবানরা। হাসি চেপে রাখতে না পেরে মহিলা সাংবাদিককে ভিডিয়ো করা বন্ধ করতে বলেন তাঁরা। মঙ্গলবার থেকেই ভাইরাল হয়েছে ভিডিও। ভিডিওটি পুরনো হলেও তালিবান যোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়াই বুঝিয়ে দিয়েছে মহিলাদের অধিকারের ব্যাপারে তাঁদের মানসিকতা কী। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে মহিলাদের ভবিষ্যত কীরকম হতে চলেছে, তারও ইঙ্গিত মিলছে এই ভিডিয়ও।
ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠন আফগানিস্তানের মহিলাদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে। তালিবানের আশ্বাসে ভরসা করতে রাজি নয় আফগানি মহিলারাও। সেই কারণেই বিগত দুই-তিনদিন ধরে লম্বা লাইন পড়েছে বোরখার দোকানগুলিতে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না মহিলারাও।