ইদের আগে অভুক্ত কয়েক লক্ষ আফগান শিশু, সামনে এল চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

ইদের আগে অভুক্ত কয়েক লক্ষ আফগান শিশু, সামনে এল চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

কাবুল: আর মাত্র কয়েকদিন বাদেই খুশির ঈদ। ইতিমধ্যেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠার জন্য রীতিমতো দিন গোনা শুরু করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। রমজান মাসের শুরু থেকেই এই উৎসবে গা ভাসানোর জন্য বহুদিন ধরেই বছরের এই বিশেষ সময়ে একাধিক প্রস্তুতি নিতে দেখা যায় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজনকে। আগের বছর পর্যন্ত আফগানিস্তানেও দেখা দিয়েছিল একই চিত্র। কিন্তু মাঝে মাত্র কয়েকটা মাস, তার মধ্যেই পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে আফগানিস্তান। সৌজন্যে তালেবান সরকার। জানা যাচ্ছে, রমজান মাসেও জাঁকজমকহীন গোটা আফগানিস্তান। তা না হয়ে আর কোনও উপায়ও নেই, কারণ যে দেশে অর্থাভাব সমস্ত সীমা পার করে যায়, পেট চালাতে সাধারণ মানুষকে কোলের শিশুকে পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হচ্ছে সেই দেশে খুশির ঈদ পালন প্রহসন মাত্র। আর তাই ঈদ উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে যখন আনন্দে মাতোয়ারা হাজার হাজার মানুষ ঠিক তখনই দুবেলা-দুমুঠো খাবারের জন্য চোখের জল ফেলতে হচ্ছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষজনকে।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালিবানদের পুনরায় আফগানিস্তান দখলের পরেই ফিরে এসেছে দুর্দিন। এর আগেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, তালেবান সরকারের আমলে কাজ হারিয়ে রীতিমতো ভিখারিতে পরিণত হয়েছেন আফগানিস্তানের কয়েক হাজার মানুষ। পেট চালাতে বাড়ির বাটি ঘটি পর্যন্ত এখন বিক্রি করতে হচ্ছে তাঁদের। বন্ধ অধিকাংশ স্কুল কলেজ, দেশের মেয়েরা বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষার অধিকার থেকে। এর মধ্যেই সম্প্রতি ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ নামের এক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রিপোর্ট আফগানিস্তান নিয়ে নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে বিশ্ববাসীর। তাদের রিপোর্টে জানা গিয়েছে রমজানের মাসে যখন গোটা ইসলাম সমাজের উৎসবে মেতে ওঠার কথা তখন আফগানিস্থানে দুবেলা খাবার জোগাড় করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আমজনতা। এক্ষেত্রে সবথেকে শোচনীয় অবস্থা আফগান শিশুদের। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুই অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে দাবি করেছে ওই সংগঠন। সূত্রের দাবি, আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই দেখা দিয়েছে একাধিক সমস্যা। তার জেরেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো একেবারেই বিপর্যস্ত। রোজগারের কোনও বন্দোবস্ত না থাকায় দেশজুড়ে ভিক্ষাবৃত্তির সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল গোটা দেশের মানুষ যদি ভিখারিতে রূপান্তরিত হয় তাহলে ভিক্ষাটা দেবে কে?

ওই সংগঠনের আরও দাবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কিছু আফগান সাধারন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যেখানে তাঁদের বক্তব্য খাবার কেনার কোন অর্থই নেই তাঁদের কাছে। এদিকে আফগান শাসনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দাম বেড়ে হয়েছে আকাশছোঁয়া, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। এর জেরেই আরও বেশি করে মাথাচাড়া দিয়েছে খাদ্যাভাব, অনাহার। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, অবিলম্বে যদি প্রতিবেশী দেশগুলো আফগানিস্তানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয় তাহলে হয়ত আফগান শিশুদের বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সম্প্রতি ভিখারির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো চিন্তিত তালিবান সরকার। বিষয়টি নাকি আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে এতটাই ভাবিয়ে তুলেছে যে তিনি এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল যে দেশের অর্থনীতি বলেই আর কিছু বেঁচে নেই সেই দেশে ভিখারিদের উপর তদন্ত চালিয়ে নতুন কোন তথ্য হাসিল করতে চাইছে তালিবান সরকার। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তালিবান সরকারকে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুরো বিষয়টিই মৌখিক। বেজিংয়ের তরফ থেকে এখনও অবধি একটা টাকাও নাকি পৌঁছয়নি আফগানিস্তানে। সবে মিলে অচলাবস্থা, অরাজকতা এবং দুর্দশা আফগানিস্তানের সর্বদিকে বিরাজমান। এই পরিস্থিতিতে আফগান সাধারণ মানুষের জন্য আর কি ভয়াবহতা অপেক্ষা করে রয়েছে আগামী দিনে এখন শুধু সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + twenty =