নয়াদিল্লি: চকোলেট বিশ্বের এমন এক আবিষ্কার যে এর জনপ্রিয়তা সেই শুরুর দিন থেকে আজও অক্ষুন্ন। এমন সুস্বাদু একটি জিনিস যার প্রেমে পড়ে যান আট থেকে আশি সকলেই। জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি, আদর-ভালোবাসার মতো আবেগ-অনুভূতি ব্যক্ত করতে বা খুব কাছের মানুষের কোনো বিশেষ দিন উপলক্ষে উপহারের তালিকায় চকোলেটের একটা আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে। আবার এযুগে সুস্বাস্থ্য অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গেও জুড়ে গেছে চকোলেটের নাম। তবে সর্বোপরি আপনি যদি সত্যিই প্রকৃত চকলেট প্রেমী হন তাহলে আজকের দিনটি আপনার জন্য সেই অর্থে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কারণ আজ 'বিশ্ব চকোলেট দিবস'। এই চকোলেট দিবস উদযাপনের বিষয়টি প্রথম কার মাথায় আসে সেই বিশেষ ব্যক্তির নাম যদিও জানা যায়নি, তবে ইউরোপে প্রথম যেদিন চকোলেটের আবির্ভাব ঘটে সেই দিনটি ছিল ১৫৫০ সালের ৭ই জুলাই, অর্থাৎ আজকের দিনটি। সেই স্মৃতি থেকেই ২০০৯ সালে প্রথমবার এই দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক চকোলেট দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও চকোলেটের মূল উপাদান কোকো উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী ঘানা'য় 'চকোলেট দিবস' উদযাপন হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমেরিকায় চকোলেট দিবস পালিত হয় ২৮ অক্টোবর। লাটাভিয়া চকোলেট দিবস পালন করে ১১ জুলাই।
আধুনিক বিশ্বে চকোলেটের ব্যাখ্যা তাই হোক না কেন। উদ্ভিদ সংক্রান্ত তথ্য বলছে যে গাছ থেকে চকোলেটের মূল উপাদান পাওয়া যায় তার খাবারের উৎস হিসেবে প্রথম চাষ করা হয়েছিল আ্যামাজোনের রেইনফরেস্টে ৫০০০ বছরেরও বেশি আগে। আর চকোলেটের ইতিহাস বলতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে সুদূর খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ সালের দিকে। সুস্বাদু এই চকোলেটের উৎস মেসোমেরিকাতে। ৪৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে, প্রথমবার উত্তেজক চকোলেট পানীয়র সঙ্গে পরিচয় হয় মানুষের। “চকোলেট” শব্দটির উৎস ধ্রুপদী ‘নাহুয়াতল’শব্দ থেকে। আদিবাসী গোষ্ঠী, অ্যাজটেকদের বিশ্বাস ছিল যে কোকো বীজ জ্ঞানের দেবতার দেওয়া একটি উপহার এবং সময়ের সাথে এটি এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে এটি মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
থিওব্রোমা কোকো গাছের কোকো বিন বা বিজ থেকে তৈরী হয় চকোলেট। ওই গাছের পড আকৃতির ফলের মধ্যেই থাকে এই কোকো বিন। এক একটি পডের ভিতর সাদা চটচটে একদম পদার্থের মধ্যে থাকে ২০ থেকে ৬০ টি বিন। চকোলেটের উপাদান হিসেবে তৈরী হতে কয়েকটি ধাপে এর প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। যেমন, বিন সংগ্রহ, সেগুলিকে শুকনো করা, সেঁকে নেওয়া এরপর গুড়ো করা। এক পাউন্ড চকোলেট তৈরি করতে ৪০০ কোকো বিন প্রয়োজন এবং প্রতিটি কোকো গাছ থেকে প্রায় ২৫০০ বিন পাওয়া যায়।
একান্তই যদি কেউ চকোলেট অনুরাগী না হন তাহলে জেনে রাখা ভালো যে চকোলেট শুধুমাত্র একটি দুর্দান্ত মেজাজ তৈরী করে নয় তাই নয় পাশাপাশি এর বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকর উপকারিতাও রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে সুষম খাবার এবং জীবনযাত্রার অংশ হিসাবে চকোলেট নিয়মিত খাওয়া যায়। বিশ্বের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা উৎস এই চকোলেট। 'হেলথলাইন'এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণায় দেখা গেছে যে ডার্ক চকোলেট (চিনিযুক্ত নয়) স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কম করতে পারে। অবশ্য বাজারে বিভিন্ন ধরণের চকোলেট পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে ডার্ক চকোলেট, মিল্ক চকোলেট, হোয়াইট চকোলেট। করোনা আবহে আজ চকোলেট দিবস প্রত্যক্ষভাবে পালনের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও নেট দুনিয়ায় কিন্তু এই উদযাপন অবাধ।