টোকিও: সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগেই শুক্রবার সকালে আততায়ী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। প্রথমে তাঁর উপরে হামলা এবং পরবর্তীতে সেই হামলার কারণে তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় এই মুহূর্তে কার্যত তোলপাড় গোটা বিশ্ব। শিনজো আবের প্রয়াণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক জ্ঞাপন করেছেন এবং আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার দেশজুড়ে জাতীয় শোক পালন করার কথা ঘোষণা করেছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু এত কিছু যে মানুষটিকে কেন্দ্র করে সেই শিনজো আবে আসলে কে? আসুন জেনে নিই তাঁর জীবনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কথা।
জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে শিনজো আবে ছিলেন জাপানের এখনও পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনও পর্যন্ত যারা যারা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন তাঁদের মধ্যে শিনজো আবে ছিলেন বয়সে সবথেকে ছোট। তবে সর্বকনিষ্ঠ এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নিজের ক্ষমতায় টিকে থাকার মেয়াদও কিন্তু রেকর্ড গড়েছে। শিনজো ২০০৬ সালে প্রথম জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু সেই সময় নানান রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং তাঁর দলের নাম একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে এক বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ খোয়াতে হয় তাঁকে। এরপর দীর্ঘ ছয় বছরের অপেক্ষা। ২০০৬ এর পর ফের ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসে শিনজোর দল এবং ফের দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপরই তিনি রেকর্ড করেছিলেন। ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার সামলেখেন যা এখনও পর্যন্ত জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসের দীর্ঘতম প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ। শিনজো আবের আগে কেউ জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদে এতদিন বহাল থাকেননি। অন্যদিকে দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শিনজো আবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। কারণ, তাঁর শাসনকালেই জাপানের সঙ্গে বহু দেশের বৈদেশিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। শিনজো জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একটি অন্য মাত্রা পায়। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও শিনজোর অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার সস্ত্রীক ভারত সফরেও এসেছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে সাড়া দিয়ে জাপানের সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উত্তরপ্রদেশের বারানসীতে গঙ্গা আরতি দেখতে এসেছিলেন। তার ঠিক ২ বছর পর আবে ফের ভারতে পা রাখেন জাপানের সঙ্গে ভারতের বুলেট ট্রেনের চুক্তি পাকা করতে। তাঁর উপস্থিতিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আহমেদাবাদে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেনের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে শিনজোর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাপানে যান ব্যক্তিগত ছুটি কাটাতে। সেই সময় আবে নিজে নরেন্দ্র মোদির আতিথ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং বেশ কিছুদিন নরেন্দ্র মোদি শিনজোর ব্যক্তিগত ছুটি কাটানোর বাসভবনেই রাত কাটিয়েছিলেন। এরপর ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং আবে। তবে শুধু নরেন্দ্র মোদি নয়, ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের আমলেও প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি সস্ত্রীক ভারতে এসেছিলেন।
তবে ২০২১ সালে ভারত সরকারের সঙ্গে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সম্পর্ক অন্য মাত্রা পায় যখন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।তবে আবে একা নন, তাঁর দাদা অর্থাৎ জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নোবুসুকে কিসির সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। ২০০৭ সালে আবে জানিয়েছিলেন, ১৯৫৭ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ডাকে সাড়া দিয়ে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা আবের দাদাও ভারত সফরে এসেছিলেন।