ব্রিটেন: একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগে হঠাৎই ব্রিটিশ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেশের মন্ত্রী থেকে সাংসদ অধিকাংশই নাকি বরিস জনসনের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন। আর তাই একের পর এক পদত্যাগ। পরিশেষে দলীয় চাপের কাছে হার স্বীকার করে বরিস নিজেও পদত্যাগ করা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর। জানা যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হঠাৎ কি এমন ঘটল যাতে মন্ত্রী থেকে দেশের জনগণ, সকলেই আস্থা হারালেন জনসনের উপর থেকে। জানা যাচ্ছে সাম্প্রতিককালে ১ কিংবা ২ নয়, পরপর পাঁচবার বিতর্কে জড়িয়েছেন বরিস। আর সেই সমস্ত বিতর্কই শেষ পর্যন্ত তাঁকে গদিচ্যুত করল। জেনে নেওয়া যাক বরিসের জীবনের সব থেকে বড় পাঁচটি স্ক্যান্ডালের কথা, যার জন্য প্রধানমন্ত্রীত্ব খোয়ানোর পথে তিনি।
পিনচার অ্যাফেয়ার
পিনচার অ্যাফেয়ার হল বরিস জনসনের রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে বড় বিতর্ক। ২০১৯ সালে ক্রিস পিনচার নামের এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে মন্ত্রিসভায় এনেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এই পিনচার আবার যৌন কেলেঙ্কারিসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। কেন এমন অস্বচ্ছ ব্যক্তিত্বকে প্রশাসনের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠলে প্রথমে তা ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জনসন। দায়সারা ভাবি জানিয়েছিলেন পিনচার সম্পর্কে এমন সমস্ত তথ্য তার কাছে ছিল না। তবে সেই সমস্ত তথ্য প্রকাশে আসার পরেও পিনচারকে কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। আর তাতেই ক্ষুদ্র হয়ে ওঠে মন্ত্রিসভার একাংশ।
পার্টিগেট
বিশ্বজুড়ে যখন থাবা বসিয়েছে কোরোনার সংক্রমণ তখন প্রায় সব দেশের মতো ব্রিটেনেও শুরু হয়েছিল কঠোর লকডাউন। করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউনই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। কিন্তু এই লকডাউনের সময়েই নিজের কৃতকর্মের জন্য বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন বরিস। ব্রিটেনে যখন কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে সেই সময়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় সরকারি বাসভবনের মধ্যেই লকডাউনের বিধি নিষেধকে তোয়াক্কা না করে ওয়াইন পার্টি করছেন তিনি। এই ছবিকে কেন্দ্র করে দেশে তো বটেই এমনকি ব্রিটেনের বাইরের বিভিন্ন দেশেও জনসনের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। এই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জরিমানা পর্যন্ত দিতে হয়।
সেক্স স্ক্যান্ডাল
২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই বরিশ জনসন এমন একজন আইন প্রণেতা কে নিযুক্ত করেছিলেন যার বিরুদ্ধে পনেরো বছরের এক কিশোরকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। সেই সময়ও জনসনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। এমনকি অভিযুক্ত ওই আইন-সন্যতা ক্ষমতায় আসার পরপরই বাকি দুজন আইন প্রণেতা তাদের পথ থেকে ইসথাফা দেন। ফলে তাদের খালি হয়ে যাওয়া পদগুলিতে ফের নিজের পছন্দের লোকদের নিয়োগ করেন জনসন, যাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের মত একাধিক গুরুতর অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি বৃটেনের মিডিয়ার হাত ধরে ওই আইন প্রণে তার কুকীর্তি জনসমক্ষে ফাঁস হয় আর তাতেই ফের বিপাকে পড়েন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী।
ওয়েন প্যাটারসন আফ্যায়ার
গত বছর, পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডার্ড কমিটি কনজারভেটিভ আইন প্রণেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ওয়েন প্যাটারসনকে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করেছিলেন জনসন। কারণ তিনি তাঁকে অর্থ প্রদানকারী সংস্থাগুলির পক্ষে লবিং করে একটি “প্রদানকৃত অ্যাডভোকেসির গুরুতর মামলা” করেছিলেন। কনজারভেটিভরা প্রাথমিকভাবে প্যাটারসনের স্থগিতাদেশ স্থগিত করতে এবং আইন প্রণেতাদের তদন্তের প্রক্রিয়াটি সংশোধন করার জন্য সংসদে ভোট দেয়। কিন্তু পরে, প্যাটারসন নিজেই পদত্যাগ করেন।
সংস্কার বিতর্ক
সম্প্রতি ডাউনিং স্ট্রিটে বরিস জনসনের একটি ফ্ল্যাট নতুন করে সাজানো হয় যেখানে সেলিব্রেটি ডিজাইনার থেকে সোনার ওয়ালপেপার মজুদ ছিল সবই। মোট খরচ হয়েছিল ১৭৮০০ পাউন্ড। আর তাতেই বিতর্কে সূত্রপাত। জানা যায় ফ্ল্যাট সংস্কারের পুরো টাকাটাই বরিশ জনসন ডোনেশনের মাধ্যমে পেয়েছেন। কিন্তু ডোনেশনের বিষয়টি কাউন্সিলের কাছ থেকে পুরোপুরিভাবে চেপে গিয়েছেন। পরবর্তীতে অবশ্য জনসন প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল যে তার এই ফ্ল্যাট সংস্কারের সঙ্গে কোনরকম দুর্নীতির যোগ নেই। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি।